রাজধানী ঢাকার রাস্তা থেকে ভাঙাচোরা, রংচটা, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) আবারও আশ্বাস দিয়েছেন বাস মালিকরা। তারা এসব গাড়ি সরাতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। আর তাতে রাজিও হয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। একইসঙ্গে রাজধানীর সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিকে নিয়ে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে ফিটনেসবিহীন, বায়ু দূষণকারী ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধকরণ সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে এই সভায় অংশ নেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।

এর আগে ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর বিআরটিএ জানিয়েছিল, কিছু বাস/মিনিবাসের রংচটা, জরাজীর্ণ, জানালা/দরজার কাঁচ ভাঙা, সামনে/পেছনের লাইট ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। কোনো কোনো বাস থেকে কালো ধোঁয়াও নির্গমন হচ্ছে। এছাড়া কিছু বাস/মিনিবাসে ভেতরে ফ্যান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ভাঙা ও অচল দেখা যায়। সিটের কভারও অপরিষ্কার। অস্বাস্থ্যকর ও ত্রুটিযুক্ত যানবাহনে যাত্রীরা চলাচলে নানাবিধ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা-২৫ অনুযায়ী ত্রুটিমুক্ত যানবাহন চলাচলের বাধ্যবাধকতা এবং এই আইনের ধারা ৭৫ অনুযায়ী কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ অবস্থায়, সংশ্লিষ্ট মোটরযান মালিকদের আগামী ৩০ নভেম্বর মধ্যে রঙচটা, জরাজীর্ণ, জানালা/দরজার কাঁচ ভাঙা, সামনে/পেছনের লাইট ভাঙা, কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী ত্রুটিপূর্ণ বাস/মিনিবাসগুলো ত্রুটিমুক্ত করতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। না হলে আগামী ৩০ নভেম্বরের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি।

ওই নির্দেশ দেওয়ার ১৬ মাস পর এসেও বিআরটিএকে একই কথা বারবার বলতে হচ্ছে। আর বাস মালিকরা বারবার বিআরটিএ-কে আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এটিকে বিআরটিএর সামনে বাস মালিকদের ‘মুলা ঝুলানোর’ শামিল বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

সভায় নূর মোহাম্মদ মজুমদার পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে বলেন, আগামী ৩১ মে তারিখের পর ঢাকার রাস্তায় কোনো ধরনের রং উঠা বাস চলতে দেওয়া হবে না। আমরা এজন্য অভিযানে বের হব। আশা করব, মালিকরা নিজ উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন বাস উপহার দেবেন। আমরা পুরো বিষয়টি মনিটর করব।’

সভায় বিআরটিএ থেকে জানানো হয়, রাজধানীতে ৩৯টি কোম্পানির ৫২৮টি ফিটনেসবিহীন গাড়ি ছিল। এর মধ্যে ২৫৭টি ঠিক করা হয়েছে। তবে এ তালিকা পূর্ণাঙ্গ আকারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার তাগিদ রয়েছে বিআরটিএর। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে ঢাকার সড়কে চলাচলকারী সব বাস-মিনিবাসের তালিকা ও মালিকদের নাম বিআরটিএ-তে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ।

তবে বাস মালিকরা কথা দিয়েছেন এপ্রিলের মধ্যে ২০ শতাংশ বাস রং করার। বাকিটা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করবেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলেন, ঢাকার সড়কে এখন সাড়ে ৩ হাজার বাস-মিনিবাস যাত্রী পরিবহন করছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এখন পুরোপুরি ফিটনেস ঠিক করা পর্যন্ত যদি ১ থেকে দেড় হাজার গাড়ি যদি বসিয়ে রাখা হয় তবে নগরে গণপরিবহন সংকট তীব্র হবে। মালিকদেরও ১ থেকে দেড় লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে।

সভার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান ঢাকার বাস মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন বাসের মালিকদের সঙ্গে বসেছিলেন। বিআরটিএ চায় ঢাকার রাস্তায় কোনও ফিটনেসবিহীন, ভাঙাচোরা বাস যেন না থাকে। তারা সময় চেয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যেই সব বাস ঠিক করা হবে। মালিক সমিতি এগুলো তদারকি করবে।

এর আগে গত রোববার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনের কালো ধোঁয়া এবং উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণ সামগ্রী না রাখা এবং বর্জ্য পোড়ানো বন্ধের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, বায়ুদূষণ রোধে ২০ বছরের বেশি পুরানো বাস রাজধানীতে চলতে দেওয়া হবে না।

মন্ত্রী নির্দেশ দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৮ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকা শহরে চলাচলকারী পুরাতন ওই বাসগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পরিবহন মালিক সমিতি ২০ এপ্রিলের মধ্যে ২০ বছরের অধিক বয়সী বাস সড়ক থেকে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া পুরাতন যানবাহন পুরোপুরি নিয়ম মেনে স্ক্র্যাপ করতে হবে।

রাজধানীতে বাসে চলাচলকারী যাত্রী শিহাবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ দেশের বাস মালিকরা কখনও সোজা হবে না। গতবারের মতো এবারও বাসে সস্তা রং করাবে এবং কয়েক মাস যেতেই সেগুলো উঠে যাবে। অভিযান পরিচালনা করেও কোনো লাভ হয়। অভিযানের সময় মালিকরা বাস চালানো বন্ধ রাখে। অভিযান শেষ হলে আবার রাস্তায় বাস নামে। বাস মালিকরা বরাবরের মতো বিআরটিএর চোখের সামনে যেন মুলা ঝুলিয়েছে। এটা ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

এমএইচএন/পিএইচ