দীর্ঘ চার মাস পর ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বাড়ি ফিরছেন আসিফ জামান। তিনি রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় যেতে সময় লাগে ১২-১৫ ঘণ্টা। সেজন্য ইচ্ছে থাকলেও খুব বেশি আসা-যাওয়া করতে পারেন না।

যাতায়াতের জন্য আসিফ সবসময় প্রাধান্য দেন ট্রেনকে। তাই ঈদযাত্রায় বাড়ি ফিরতেও আস্থা রেখেছেন এই বাহনে। যদিও অনলাইনের টিকিট যুদ্ধ, নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশনে পৌঁছানো, বিলম্বিত সময়ে ট্রেনের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তবে শেষ পর্যন্ত যখন ট্রেনে উঠতে পেরেছেন নিমেষেই দূর হয়েছে সব কষ্ট। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার খুশিই এখন তার কাছে বড় বিষয়।

শুধু আসিফ জামানই নয়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে হাজার-হাজার যাত্রী ছুটছেন নাড়ির টানে। আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) শুরু হয়েছে বিশেষ ট্রেন যাত্রা। সেজন্য সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করছেন যাত্রীরা। বড় ধরনের শিডিউল বিপর্যয় না হলেও রয়েছে বিলম্বের অভিযোগ। তবে সেটিও একেবারেই সীমিত। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে অনেকটা স্বস্তির সঙ্গেই বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ।

সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের যাত্রীদের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। গত ২৪ মার্চ যেসব যাত্রী ৩ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন তারা আজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের খুব বেশি ভিড় দেখা যায়নি। অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যেই যাত্রীরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

রফিকউল্লাহ খান নামের জয়ন্তিকা ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, টিকিট পাব কি না সেটি নিয়ে অনেক সংশয় ছিল। কিন্তু খুব সহজেই অনলাইনে টিকিট কাটতে পেরেছি এবং আজ কোনো ভিড় ছাড়াই এখানে এসেছি। কোনো ভোগান্তি হয়নি। অন্যবারের চেয়ে এবার ভিড় কম। টিকিটের বাইরে স্টেশনে কোনো যাত্রী নেই। আশা করছি সবাই মোটামুটি ভালোভাবেই বাড়ি যেতে পারবে।

অপরদিকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে স্টেশনে ভিড় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আজ প্রথম দিন তেমন কোনো ভিড় ও ঝামেলা নেই। সকাল থেকে যাত্রীরা অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতোই স্টেশনে প্রবেশ করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে কোনো প্রকার টিকিট কালোবাজারির সুযোগ নেই।

স্টেশন মাস্টার বলেন, স্ট্যান্ডিং টিকিট ২৫ শতাংশের বেশি হওয়ায় সুযোগ নেই। তাই সবাই খুব স্বস্তির সঙ্গেই যাত্রা উপভোগ করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ ছাড়া সকাল থেকে শিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই ঢাকা থেকে ট্রেন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানান কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। তিনি বলেন, স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন কোনো যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে না হয়। শিডিউল বিপর্যয় নেই। তবে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বাইরে থেকে যেসব ট্রেন ঢাকায় দেরিতে এসে পৌঁছাচ্ছে সেগুলো আবার ফিরতি যাত্রার জন্য প্রস্তুত করতে কিছুটা সময় লাগছে। আমরা ঢাকার বাইরেও যোগাযোগ করেছি। আশা করি এ সমস্যাও কেটে যাবে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত যথাযথ নিয়মে সব ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে।

স্টেশন ম্যানেজার জানান, আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৫টিরও বেশি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ধূমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯), পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬), পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯), নীলসাগর (৭৬৫), সোনার বাংলা (৭৮৮), এগারো সিন্দুর (৭৩৭), তিস্তা (৭০৭), মহানগর প্রভাতি (৭০৪),  সুন্দরবন (৭২৬), মহুয়া (৪৩), কর্ণফুলি (০৪), রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১), তিস্তা (৩৪), জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) এবং একতা এক্সপ্রেস।

প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ ট্রেন যাত্রার ৪ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে গত ২৫ মার্চ ও ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে গত ২৬ মার্চ। ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ৭ এপ্রিলের টিকিট ২৮ মার্চ, ৮ এপ্রিলের টিকিট ২৯ মার্চ ও ৯ এপ্রিলের টিকিট ৩০ মার্চ বিক্রি করা হয়েছে।

এ ছাড়া চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে। যাত্রীদের অনুরোধে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে দেওয়া হবে।

আরএইচটি/এসএসএইচ