জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটি ভেঙে দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে চায় অরাজনৈতিক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীপন্থী আলেমরা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তারা নিজেদের হেফাজতের ‘মূলধারা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সামনে আসার পরিকল্পনা করছে। তবে, তার আগে সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে মাঠে নামা হবে।

শফীপন্থীরা বলছেন, অবৈধভাবে বাবুনগরীদের কমিটি হয়েছিল। হেফাজতের মূল কমিটি ছিল আহমদ শফীর গঠন করে যাওয়া কমিটি। ফলে, আহমদ শফীর মৃত্যুতে আমিরের যে পদটি খালি আছে, তা সংগঠনের অন্যান্যদের মতামতের ভিত্তিতে পূরণ করা হবে। আর এই কমিটিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। এতে আহমদ শফীর আদর্শ মেনে বাবুনগরী যদি তাদের সঙ্গে আসতে চান, তাতে কোনো আপত্তি নেই।

একইসঙ্গে সংগঠনের নেতারা চাইলে তাকে নতুন আমির হিসেবে মেনে নেবে। কিন্তু কমিটিতে কিছু সংস্কার আনতে হবে। কমিটির যারা মারা গেছেন তাদের জায়গায় নতুন করে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর মামুনুল হকসহ হেফাজতের বিতর্কিত নেতাদেরও বাদ দেওয়া হবে আগের কমিটি থেকে।

আহমদ শফীর মৃত্যুর পরে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি থেকে বাদ পড়া আল্লামা শফীর অনুসারী তার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, শফী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মঈনুদ্দীন রুহী, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আমিনীরা নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেয়। 

গত ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আহমদ শফীর বড় ছেলে ইউসুফ বিন আহমদ মাদানী বলেন, হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিল ডেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। যদিও পরবর্তী সময়ে তারা সেটা করেননি। কিন্তু ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার পর বাবুনগরীপন্থী হেফাজতের নেতারা গ্রেফতার হতে থাকলে শফীপন্থীরা আবারও নতুন করে আশার আলো দেখতে পান।

আরও পড়ুন: হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

রোববার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় হেফাজতের আহমদ শফীর কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আগেই বলেছি বাবুনগরী হেফাজতের মূলধারায় নেই। তারা অবৈধভাবে কমিটি করেছিল। সেটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। মূলধারার হেফাজতে আমরা আছি। এখন তারা যদি আহমদ শফীর আদর্শ মেনে ফিরে আসেন, তাদের আমরা স্বাগত জানাব। আমরা তাদের সঙ্গে যাব না।

শফীপন্থীদের নতুন কমিটি গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটা এখন কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, আমরা নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেইনি। কারণ, কমিটিতো আল্লামা শফী গঠন করেই গেছেন। আমরা সেটার মধ্যে কিছু সংস্কার করব। সেখানে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করব। 

তাহলে নতুন কমিটিতে কে আমির হবেন?- জানতে চাইলে রুহী বলেন, এটা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হবে। তিনি (আহমদ শফী) যখন মারা গেছেন একজন আমির নির্বাচিত হবেন। বাকি কমিটির সবাই বহাল আছেন। কমিটির যারা মারা গেছেন সেখানে নতুন করে সংযোজন হবে। 

সেক্ষেত্রে ওই কমিটির মহাসচিব হিসেবে জুনায়েদ বাবুনগরীর আমির হওয়ার কতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে, জানতে চাইলে রুহী বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি যদি তাকে আমির হিসেবে চায়, সবাই যদি মত দেয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। 

আরও পড়ুন: হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তির পর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

মামুনুল হকদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে রুহী বলেন, তাদের কমিটি রাখা হবে কি-না তাও সবার মতামতের ওপর নির্ভর করবে। কমিটির নেতারা না চাইলে তাদের বাদ দেওয়া হবে।

শফীপন্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী এখন দুবাইতে। আর মুফতি ফয়জুল্লাহ অসুস্থ। তাই সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে দুই-একদিন সময় লাগতে পারে।

গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) এ প্রতিবেদককে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমি অসুস্থ। এখন বাসায় আছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শফীপন্থী হেফাজতের এক নেতা বলেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আহমদ শফীপন্থীদের বৈঠক ডাকা হতে পারে। সেখানে নতুন করে আহমদে শফীর হেফাজতের কমিটিকে সক্রিয় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এএইচআর/এইচকে/এসএম