কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো ভুয়া প্রতিষ্ঠান। নাম দেন বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স রাইটস সোসাইটি। এই পরিচয় ব্যবহার করে তারা বাজারে পরিচালনা করতেন অভিযান। অসংগতি পেলে জরিমানার নামে তুলতেন মোটা অঙ্কের চাঁদা। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সবশেষ এই চক্রের সন্ধানে নামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আটক করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠানের আইটি ইনচার্জ মো. শাহজালাল উদ্দিনকে। পরে তাকে মামলা করে সোপর্দ করা হয়েছে পল্টন থানা পুলিশের কাছে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মহাপরিচালক বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করে, নকল ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে যা প্রচলিত গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়। এর সুফল ও নকল ভেজাল বিক্রয়কারীদের মনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নামের সঙ্গে সদৃশ রেখে বিভিন্ন ভুয়া সংগঠন গড়ে ওঠে। তারা বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতের জন্য নামে বেনামে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশিন নেয়। এ সব সংগঠন বাজার অভিযান ও মোবাইল কোর্টের নামে বাজারে এক ধরনের চাঁদাবাজি করে আসছে। এসব প্রতারণা বন্ধের নিমিত্ত ও জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একাধিকবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। গত বছর এমন অনেক সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স রাইটস সোসাইটি’ নামে এমনি একটি ভুয়া সংগঠন পঞ্চগড় জেলায় ভুয়া টিম নিয়ে ভোক্তা-অধিকার আইন ২০০৯ এর ৪৩ ও ৫৩ ধারায় রীতিমতো জরিমানার নামে চাঁদা আদায় করেছে। পরে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ৩ জনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক বলেন, ঢাকার এই সংগঠনটির ব্যাপারেও আমরা তদন্তের নির্দেশ দেই। এর প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর জব্বার মণ্ডল বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স রাইটস সোসাইটি নামক সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অভিযোগ) মো. মাসুম আরেফিন আরজেএসসিতে গিয়ে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশনের খোঁজ খবর নেন। পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে আরজেএসসি থেকে রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করা হলেও ২০০৬ এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির হালনাগাদ করা হয়নি।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স রাইটস সোসাইটি নামক সংগঠনটির প্রতারণার আদ্যোপান্ত তুলে ধরে আরও বলেন, জরিমানার নামে প্রতিষ্ঠানটি চাঁদাবাজির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যা দেশে প্রচলিত আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব কারণে অধিদপ্তর তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। 

এরূপ চাঁদাবাজির তথ্য অধিদপ্তরের হটলাইন (১৬১২১) এর মাধ্যমে অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদেরও তিনি আহ্বান জানান।

অপরদিকে বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স রাইটস সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার, সংগঠনের সদস্য মো. সোহেল ও মো. আলমগীরের কাছ থেকে সার্বিক অপরাধ বিবেচনায় সতর্ক করে তদন্তের স্বার্থে তলব করা হলে উপস্থিত হবেন শর্তে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।

প্রধান অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের আইটি ইনচার্জ মো. শাহজালাল উদ্দিনকে লিখিত এজাহারসহ পল্টন থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন উৎসবের পূর্বমুহূর্তে এরূপ প্রতারক প্রতিষ্ঠানসমূহ তৎপর হয়ে ওঠে। 

তিনি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীবৃন্দকে ভোক্তা অধিদপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

আরএইচটি/এমএ