ঈদুল ফিতর আসন্ন। তার মধ্যে লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রোববার (৭ এপ্রিল) চলছে সরকারি ছুটি। সব মিলে ব্যস্ত ঢাকার সড়কে কমেছে কোলাহল। যানজটের শহরে নামতে শুরু করেছে নীরবতা। সড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল, ইন্টার সেকশনে যানবাহনকে দাঁড়াতে হচ্ছে মিনিট বা কয়েক সেকেন্ডের জন্য। এরপর আবারো ঘুরছে গাড়ির চাকা। অর্থাৎ খালি হচ্ছে ঢাকা, রাস্তাঘাট ফাঁকা।

রাজধানীর সড়ক ফাঁকা হলেও প্রিয়জন-স্বজনদের সঙ্গে যারা নাড়ির টানে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি ফিরছেন তাদের গন্তব্য সব ঘাট, টার্মিনাল কিংবা স্টেশন। আর যারা ঢাকায় থাকছেন কিংবা ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা তাদের অনেকে যাচ্ছেন মার্কেটে। সংগত কারণে যানবাহনের চাপ মার্কেটমুখী ও টার্মিনালমুখী সড়কে।

রোববার রাজধানীর শ্যামলী, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কাকরাইল ও প্রেসক্লাব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো সড়কে নেই গাড়ির চাপ। সিগন্যাল বা ইন্টারসেকশন ছাড়া কোথাও যানবাহনকে দাঁড়াতে হচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি বরং আরও কমেছে। এ চিত্র চিরচেনা ঢাকার মতো না। ফাঁকা ঢাকায় চলতে দেখা গেছে, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও কিছু সংখ্যক বাস। তবে সড়কে রিকশার চলাচল বেড়েছে।

আর ঢাকা ফাঁকা হতে থাকায় চলাচলে কমে এসেছে সময়। ঘণ্টার পথ ২০ মিনিটেই পৌঁছানো যাচ্ছে। রাজধানীর সড়কের কোথাও কোনো যানজটের দেখা মেলেনি। সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে নির্ভার।

ট্রাফিক রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসাইন জানান, অনেক নির্ভার। আগে তো প্রায়দিনই ট্রাফিক বক্সে কিংবা সড়কে দাঁড়িয়েই ইফতার করতে হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে চাপ কমতে শুরু করেছে। আজ তো আমার এলাকায় কোনো চাপ নেই। একদম ফাঁকা। তবে বেইলি রোডে কিছুটা মানুষের যাতায়াত বাড়ে আছরের নামাজের পর।

তেজগাঁওয়ে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন আলী হোসেন মিন্টু। তিনি বলেন, অফিস ছুটি। কিন্তু হঠাৎ অফিস থেকে কল জরুরি কাজ পড়ে গেছে। বের হয়ে মোহাম্মদপুর থেকে অফিসে পৌঁছাতে সময় লাগছে মাত্র ১৭ মিনিট। যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অবিশ্বাস্য।

বাসের সংখ্যা কমায় যাত্রী বেড়েছে রিকশায়। রিকশা চালক হবিবার রহমান বলেন, রাস্তা খালি। দূর-দূরান্তেও যাওন যাচ্ছে। কোথাও বাধা পাইতাছি না। ভাড়াও পাইতাছি বেশি সময়ও লাগতাছে কম। ঈদ তো আইসা পড়ছে, এখন ফাঁকা ঢাকায় যাত্রী টেনে একটু বেশি ভাড়া পাওন যায়।

ওয়েলকাম পরিবহনের চালক সবুজ বলেন, সাভার থেকে শ্যামলী পর্যন্ত আসতে মুধু মাজার রোডেই ভুগতে হয়েছে। আর কোথাও কোনো চাপ নেই। রাস্তায় জ্যাম নেই। সমস্যা হলো যাত্রীও কমছে। যা আছে সব মার্কেটে দৌড়াইতেছে।

গাড়ির চাপ মার্কেটমুখী সড়কে

ঢাকা ফাঁকা হলেও মার্কেটমুখী সড়কে এখনো চাপ ও কখনো জ্যাম তৈরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। বসুন্ধরা, নিউ মার্কেট, বঙ্গবাজার, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনের সড়কে আছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। মার্কেটের সামনের সড়কে গাড়ি দাঁড়াচ্ছে, সড়কেই যাত্রী নামছে ও উঠছে গণপরিবহনে। এর বাইরে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ বেশি মার্কেটের সামনে।

ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) স্নেহাশীষ কুমার দাস জানান, পুরো তেজগাঁওয়ে চাপ থাকে সড়কে। সেই চাপ উধাও। কিন্তু বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বসুন্ধরা শপিংমলের সামনের সড়কে। যানবাহন দাঁড়াচ্ছে, পার্কিংয়ে ঢুকছে। পায়ে হাঁটা যাত্রী, পথচারী ও ক্রেতায় একাকার অবস্থা এখানে। বিকেল হতে চাপ বাড়ছে, যা থাকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

ট্রাফিক মিরপুরের দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার কাজী মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েনি গাবতলী বা দারুসসালামে। ভোরে ও সকালে কিছুটা চাপ ছিল। দাঁড়িয়ে থেকে সে চাপ ক্লিয়ার করেছি। দিনভর কোনো চাপ নেই। সিগন্যাল বা সড়ক স্বাভাবিক।

জেইউ/জেডএস