যাই যাই করে ২৪ তারিখে পৌঁছেছে চৈত্র মাস। একদিকে চলছে রমজান মাস অন্যদিকে গত কয়েকদিনের টানা গরমে অস্বস্তিতে পড়েছে দেশের মানুষ। চৈত্রের শেষের দিকে এসে দেশজুড়ে বইছে দাবদাহ। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অসহনীয় এ গরমের প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে। হঠাৎ চৈত্রের বিদায়বেলায় খরতাপে এই চৈত্রের তেজ টের পাচ্ছেন তারা!

গেল কদিনে চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মাঠ, ঘাট, পথ, খাল, বিল, প্রান্তর ফেটে চৌচির। উত্তপ্ত সূর্য যখন দুপুরে মাঝ আকাশে আসে, সেসময় রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরে। চৈত্রের শেষেও আকাশে মেঘ নেই। আছে সূর্যের চোখ রাঙানি। প্রখর রোদকে সঙ্গী করে সকাল শুরু হচ্ছে। ভরদুপুরে তেতে উঠছে সূর্য। শেষ বিকেলেও রোদের তেজ কমছে না। ফলে খেটে খাওয়া মানুষদের চৈত্র মাস বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তার কেমন তেজ। তপ্ত রোদে খাঁ খাঁ করছে চারপাশ, এরমাঝেই কর্মজীবী মানুষের কাজ চলছে। একটু শীতল অনুভূতির জন্য মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা।

গেল কদিনের তুলনায় আজ দুপুর থেকে তেমন খাঁ খাঁ রোদ লক্ষ্য করা যায়নি। তবুও রয়েছে গরম। বিগত কয়েকদিনে গরম ছিল আজকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সেই গরমে নিজেদের কাজ করতে গিয়ে জ্বলেছে শরীর, আর ঝরেছে শরীরের ঘাম- এমনভাবেই অসহনীয় তীব্র গরমের বর্ণনা দিয়ে নিজেদের ভোগান্তির কথা ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের কাছে জানিয়েছেন খেয়ে খাওয়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

এই কদিনের গরমে বুঝতে পেরেছি গরমের তীব্রতা কত বেশি ছিল। খুব কষ্ট হয়েছে এই কদিন। কিন্তু সামনে ঈদ, অনেক খরচ, এই তীব্র গরমের মধ্যেও কাজ করে গেছি। নিজের শরীর কষ্ট পেয়েছে তবুও কাজ করে যেতে হয়েছে।

তাদের মধ্যে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষের বাসাবাড়ি থেকে ময়লা ভ্যানে করে সেগুলো এসটিএসে পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ। তবে গত কিছুদিনের তীব্র গরমে নিজের কাজ ছেড়েই পালাতে ইচ্ছে হয়েছিল। এত গরম, পুরো শরীর দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে, ঘামতে ঘামতে শরীর দুর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়েছে। তবুও ঘাড়ের সঙ্গে রাবার বেঁধে ময়লা বোঝাই ভ্যান মাইলের পর মাইল টেনে নিয়ে গেছি। এই কদিনের গরমে বুঝতে পেরেছি গরমের তীব্রতা কত বেশি ছিল। খুব কষ্ট হয়েছে এই কদিন। কিন্তু সামনে ঈদ, অনেক খরচ, এই তীব্র গরমের মধ্যেও কাজ করে গেছি। নিজের শরীর কষ্ট পেয়েছে তবুও কাজ করে যেতে হয়েছে।

রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিলেন হীরা মিয়া। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলেও তিনি রাজধানীতেই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আলাপকালে হীরা মিয়া বলেন, আমার অন্য সহকর্মীরা আগেই ঢাকা ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চলে গেছে। যেহেতু ঈদ তাই একটু বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। বাড়িতে পরিবারের অনেক সদস্য আছে, তাই তাদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে ঈদের অনেক খরচ আছে। যে কারণে আমি এখনো রাজধানীতে থেকে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। তবে রোজার মাসে কাজ করা কঠিন হলেও গত কয়েকদিনে অতিরিক্ত গরমে শরীর পুড়ে গেছে। তবুও কাজ করে যেতে হয়েছে, আজও কাজ করছি। তবে আজ গত কয়েক দিনের তুলনায় রোদ গরম কম। আমরা যারা এই তপ্ত রোদের মধ্যে শ্রমিকের কাজ করেছি তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, গরম, রোদে কীভাবে শরীর পুড়ে যায়। এর মধ্যে কাজ করা কতটা কঠিন।

ভ্যানচালক নাজিম উদ্দিন। গুলিস্তান থেকে ভ্যানে মালামাল নিয়ে মগবাজার পর্যন্ত এসেছেন। এদিকে গরমে তার শার্ট ভিজে জবুথবু হয়ে আছে। গোটা শরীর বেয়ে ঘাম মাটিতে পড়ছে।

আজ গরম একটু কম তবুও শরীর ঘেমে পুরো গোসল হয়ে গেছে। তবে এই কদিন যে গরম ছিল তা বলার বাইরে। আকাশ থেকে সূর্যের তাপ নামে, আবার সড়ক থেকে তীব্র গরমের তাপ উঠে।

এই অবস্থায় গরমের তীব্রতা নিয়ে কথা হয় নাজিম‌ উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, আজ গরম একটু কম তবুও শরীর ঘেমে পুরো গোসল হয়ে গেছে। তবে এই কদিন যে গরম ছিল তা বলার বাইরে। আকাশ থেকে সূর্যের তাপ নামে, আবার সড়ক থেকে তীব্র গরমের তাপ উঠে। সব মিলিয়ে জীবন নেতিয়ে পড়েছিল এই কদিনে, ভ্যান টানার কাজ কোনোভাবেই করা যাচ্ছিল না। এই কদিনে আমাদের মত কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের উপর দিয়ে খুব কষ্ট গেছে। আমরা এই কদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত গরমের কারণে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করেছি। আমরাই শুধু বুঝেছি চৈত্রের এই ভয়াবহ গরমের তেজ কতটা।

এদিকে গত কয়েকদিন টানা গরমে অস্বস্তিতে পড়েছে দেশের মানুষ। বিশেষ করে তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তবে আগামী তিনদিন, গত কয়েকদিনের তুলনায় স্বস্তির বাতাস বইবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তিনদিন পর অর্থাৎ আগামী ১০ এপ্রিল থেকে আবার তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।

রোববার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ এ তথ্য জানান।

এবার ঈদের দিন (১০ বা ১১ এপ্রিল-চাঁদ দেখার ওপর) বৃষ্টি থাকবে না, বরং ভ্যাপসা গরম থাকবে।

তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ কিছুটা কমবে। সারা দেশের তাপমাত্রাই কমবে। আগামী ১০ এপ্রিল থেকে আবারও সারা দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। সেই হিসেবে এবার ঈদের দিন (১০ বা ১১ এপ্রিল-চাঁদ দেখার ওপর) বৃষ্টি থাকবে না, বরং ভ্যাপসা গরম থাকবে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার বিষয়ে সংস্থাটি জানিয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে।

এ সময়ে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে। এর ফলে পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।

এএসএস/পিএইচ