রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানশন ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই ও তিন নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রোববার (২৫ এপ্রিল) রাতে ও সোমবার (২৬ এপ্রিল) সকালে র‍্যাবের বিশেষ অভিযানে মামলার দুই নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে ঢাকা থেকে ও তিন নম্বর আসামি মোহাম্মদ মোস্তফাকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সোমবার বিকেল ৪টায় কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাত ৩টা ১৮ মিনিটে হাজী মুসা ম্যানশনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক চারজনের মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান। 

আগুনের ঘটনায় শুক্রবার রাত ৯টায় বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী শিকদার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ এবং কেমিক্যাল গোডাউনের মালিকদের।

মামলার বাদী এজাহারে অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে হাজী মুসা ম্যানশনের নিচতলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি টিম প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা থানা পুলিশের সহায়তায় ভবনের ভেতর প্রবেশ করে আহত অবস্থায় ২১ জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সাজারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। পরে ভবন তল্লাশি করে ৩ জন পুরুষ ও একজন নারীর মরদেহ উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় প্রধান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়।’

এজাহারে আরও বলা হয়, ‘মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফা আহম্মেদসহ অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা ভবনের নিচতলায় দাহ্য পদার্থ এবং কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান/গোডাউন হিসেবে তাচ্ছিল্যভাবে ব্যবহার করে। কেমিক্যালের দোকান/গোডাউনের আগুন লাগার ফলে কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ও আগুনে দগ্ধ হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়। উক্ত বাড়িতে বসবাসরত আবাসিক ভাড়াটিয়াদের বিভিন্ন আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে ও ভাঙচুর হয়ে আনুমানিক পঞ্চাশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উক্ত আসামিরা তাচ্ছিল্যভাবে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আবাসিক স্থলে দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান/গোডাউন ব্যবহার করে অবহেলার ফলে মৃত্যু ঘটাইয়া ও ক্ষতিসাধন করে পেনাল কোড আইনের ৩০৪-ক/৩৩৭/৪২৭ ধারায় অপরাধ করেছে।’

এর আগে মামলার বিষয়ে বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন ফকির বলেন, অবহেলাজনিত মৃত্যু এবং অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্য রাখার দায়ে ভবন মালিক ও গোডাউন মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জেইউ/জেডএস