রাজধানীর মিরপুরের বুড়িরটেক এলাকায় ৬৫০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি উদ্ধার করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এ জমি কিছু অবৈধ দখলদাররা—আলীনগর হাউজিং, হ্যাভেলী প্রোপার্টিজ, খাতুন প্রোপার্টিজের নামে অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় করছিল বলে জানায় প্রশাসন।

তবে হ্যাভেলী প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড দাবি করেছে, আদালতের আদেশের তোয়াক্কা না করে এবং নোটিশ ছাড়াই পল্লবী থানাধীন বাউনিয়া মৌজায় ডিওএইচএস সংলগ্ন তাদের আলীনগর প্রকল্পে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার সাহা ও মিরপুর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার এ অভিযান চালান। 

অভিযানের নির্দেশন দেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান ও তত্ত্বাবধান করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শিবলী সাদিক। উচ্ছেদ কার্যক্রমের সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিপুল সদস্য নিয়োজিত ছিলেন।

ঢাকা জেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত এই সম্পত্তি (০৫/৭২-৭৩ এল) কেসমূলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনুকূলে অধিগ্রহণ করা হয়। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এ সম্পত্তি অব্যবহৃত রাখায় ২০০৯ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রশাসক এ সম্পত্তি পুণঃগ্রহণ করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে পুণঃগ্রহণের গেজেট প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তি মতে সাবেক মিরপুর (বর্তমান পল্লবী) থানাধীন বাউনিয়া মৌজার সি,এস ৩১০১, ৩১০২, ৩১০৩, ৩১০৪, ৩১০৫, ৩১০৬, ৩১০৭, ৩১২১ এবং ৩১২৩ দাগে পুণঃগ্রহণ করা জমির পরিমাণ ১০.১৮ একর। 

গেজেট বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক পুণঃগ্রহণ করা এ ভূমি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে রেকর্ড সংশোধন করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৬ একর ভূমি থেকে আজ সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার করা এ ভূমিতে সরকারি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ভূমিতেও পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

এদিকে হ্যাভেলী প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনে প্রকল্প করেছে কোম্পানিটি। যাদের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে তাদের নামে সিএস, আরএস, এসএ, মহানগর জরিপ এবং খাজনা খারিজসহ যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। জমি কেনার পর কোম্পানি নিজ নামে খাজনা খারিজ করিয়ে নেয়। এরপর অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের কাছে প্লট বিক্রি করেছে কোম্পানি। 

প্লট ক্রেতারা যথা নিয়মে নিজ নামে নামজারি ও খাজনা খারিজ করিয়ে নেন। প্লট ক্রেতাদের কারও কারও ইমারত নির্মাণ চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায়, হঠাৎ সেখানে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রহস্যজনক কারণে ৬-৭ মাস আগে এই প্রকল্পে নতুন করে খাজনা খারিজ বন্ধ করে দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মৌখিকভাবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। তবে, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কোনো চিঠি দেয়নি।

বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে হ্যাভেলী প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। আদালত আদেশে বলেছেন, প্রকল্পের খাজনা খারিজ, মিউটেশন, রেজিস্ট্রেশন এবং ভবন নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে বাধা দেওয়া কিংবা উচ্ছেদ করা যাবে না। আদালত একইসঙ্গে প্লট মালিকদের নামে ছাড়পত্র প্রদান করার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। 

পরবর্তীতে আদালতের আদেশ ও নির্দেশনাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে কোম্পানি। এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসন সেই প্রতিবেদন দেওয়ার উদ্যোগ না নিয়ে ঈদের ছুটির মধ্যে রহস্যজনকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রকল্পের প্রাচীরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে।

মঙ্গলবার উদ্ধার অভিযান শেষে এ ভূমি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, জনকল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রমে এ ভূমি ব্যবহার করা হবে এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

/এমএইচএন/এমএসএ