জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক। বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে নেমে যায় দস্যুরা। এরপর জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। 

এদিকে উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রোববার (১৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় কেএসআরএমের কর্পোরেট কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাহাজের মালিকপক্ষ। এতে জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়া থেকে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কথা বলেন কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম। 

তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে আমাদের মালিকানাধীন এমভি জাহান মণি দস্যুদের কবলে পড়েছিল। তখন আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। একারণে ওই জাহাজ উদ্ধার একটু বেশি সময় লেগেছিল। এমডি আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে আমরা অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যেটা যেভাবে করা দরকার সেভাবে করেছি। জাহাজটা ওরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথমে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে জাহাজে থাকা যন্ত্রের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত আমরা সব লোকেশন ট্র্যাক করতে পারি। দস্যুদের কমান্ডারের সহকারী ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। শুরুতে তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়। প্রথম দিনে আমরা মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, তাদের পক্ষ থেকে কে যোগাযোগ করবে এবং আমাদের পক্ষ থেকে কে যোগাযোগ করবে। এরপর প্রতিদিনের ওদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কথার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাবিকরা কেমন আছে এবং কত তাড়াতাড়ি আমরা মুক্ত করতে পারব? 

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জাহাজ পরিচালনা করি সেহেতু সবকিছু আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অর্গানাইজেশনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ মেনটেন করতে হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে কথা হতো জুমে এবং টেলিফোনে। আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো একজন আরেকজনের সঙ্গে শেয়ার করতাম। এভাবে আমরা পুরো প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেই।

এর আগে গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

এমআর/জেডএস