পূর্ব নোটিশ ছাড়াই বঙ্গবাজারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার এবং দোকানের মালামাল লুট হওয়ার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা বা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। 

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বঙ্গবাজারে উপস্থিত হয়ে ব্যবসায়ীরা এসব অভিযোগ করেন।

মনির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা তো পথের ফকির হয়ে গেছি। আমাগো সবশেষ। আগুনের ঘটনার পর গত এক বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর যে চেষ্টা করেছিলাম সেটাও শেষ হয়ে গেছে। চাঁদ রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়েছিলাম। পরে গতকাল শুনেছি হঠাৎ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এরপর আবার শুনলাম যে, মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। আজকের দেশের বাড়ি থেকে এসে দেখি কিছুই নাই। দোকানের সবকিছু লুট হয়ে গেছে। আপনারা তাকিয়ে দেখেন চারপাশে কোনো কিছুই নাই। আমাদের বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন রইল না। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না।’

প্রায় ৩০ বছর ধরে বঙ্গবাজারে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই সবকিছু ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন কোথায় যাব, কী করব কোনো কিছুই বলতে পারছি না। আগুনের ঘটনার একবছর পার হয়ে গেছে তবু আমাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। আগুন লাগার পরে শুনেছি প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক জায়গা থেকে সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোনো টাকাই আমরা পাইনি। এই আর্থিক অনুদান যদি আমাদেরকে দেওয়া হয় তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। না হলে শেষ হয়ে যেতে হবে।’

মো. বেলাল হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের সব জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভবিষ্যতে কি করব সেটি চিন্তা করছি। এখানে যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে সেই তথ্য আমাদেরকে আগে জানানো হয়নি। তাহলে হয়ত মালপত্র সরিয়ে রেখে যেতে পারতাম। কিন্তু এখন তো দেখছি কিছুই নেই। আমরা পথের ফকির হয়ে গেলাম ভাই। এমনকি এবিষয়ে মালিক সমিতও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমরা যারা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলাম তারা এখন বেকায়দায় পড়েছি। আর উচ্ছেদের সময় আগে জানিয়ে যদি সময় দেওয়া হতো তাহলে ক্ষতি কিছুটা কম হতো।’

তবে আগে থেকেই উচ্ছেদের ব্যাপারে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল এবং কোনো ধরনের মালামাল লুটের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন উচ্ছেদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি এনডিই কোম্পানির ভেকু চালক রাজন মিয়া। তিনি বলেন, মালামাল লুটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা আগে থেকেই এখানে নোটিশ দিয়েছি। বড় সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী উচ্ছেদ করে জায়গা পরিষ্কার করা হচ্ছে।

এসময় সেখানে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ভেকু চালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান।

তবে বিষয়টি নিয়ে আরো স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য এনডিই কোম্পানির দায়িত্বশীল কাউকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে বঙ্গবাজারে বহুতল নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২য় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এসময় অস্থায়ী দোকান ও বাঁশের কাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে দেখা যায়। মূলত, বঙ্গবাজারে নতুন করে মার্কেট করার লক্ষ্যে এসব অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

আরএইচটি/জেডএস