রাজধানীর পল্লবী থানাধীন স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় রিহান ইসলাম ওরফে পাভেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল বুধবার টাঙ্গাইল, বরগুনা ও বরিশাল মহানগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, রায়হান বাবু (২৪), সোহেল তোতা মামা (২৪) ও বাচ্চু ওরফে কাজল বাচ্চু (২৩)।  

এর আগে একই ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ। ডিবি কর্তৃক গ্রেপ্তার তিনজনসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদক সেবনের জন্য তাজমুল নামে আরেক সহযোগীর মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর বাড্ডার পাঁচতালা বাজার এলাকার বাসা থেকে ডেকে মোটরসাইকেলে করে পাভেলকে নেওয়া হয় পল্লবীতে। পল্লবী থানাধীন ১২ নং সেক্টরের স্বপ্ন নগর আবাসিক এলাকার টেকেরবাড়ি এলাকায় গণপূর্তের পুকুরের উত্তরপাড়ে মাদক সেবন করেন পাভেল। এর মধ্যে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে বাসযোগে আসে মূল পরিকল্পনাকারী হাবিবসহ আরও কয়েকজন। সবাই একসঙ্গে পাভেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চাকু ও ছুরি দিয়ে পেট ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি কোপ দেয়। এরপর তাকে গণপূর্তের পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় সবাই। স্থানীয়দের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল থেকে পাভেলের মরদেহ উদ্ধারের পর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পল্লবী থানা পুলিশ।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাভেলের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলায়। বাবার নাম শায়েস্তা খান। পাভেল থাকতেন বাড্ডার পাঁচতলাবাজার এলাকায়। পাভেল বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তবে মায়ের ভাষ্য মতে, ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন পাভেল।

এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল মা পারুল বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ৬ জন। তারা হলেন, মো. হাবিব (২৮), মো. হানিফ (২৬), মো. আনিছ (২২), রায়হান নানু (২২), মো. মিলন (৩৭), ও মো. জনি (২৬)। বাকি আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী, পাভেলের পিঠে ছোট বড় ২২টি, মাথায় ৮টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত পেয়েছে পুলিশ। আর মাথার পেছনে প্রায় তিন ইঞ্চি লম্বা আঘাতের চিহ্ন, কোমরে চারটি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত দেখা গেছে। পাভেলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় মোট ৪৫টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত পেয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার(১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব শত্রুতা, চাঁদাবাজি ও মাদকের জের ধরে হত্যার শিকার পাভেল। ভুক্তভোগী ও মূল অভিযুক্ত বন্ধু হলেও তাদের মধ্যে শত্রুতা ছিল।

তিনি বলেন, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গ্রুপিং নিয়ে পাভেল ও হাবিবের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। সে সময় পাভেল হাবিবের হাতে কোপ দিয়েছিল। ওই ঘটনায় ২০২৩ সালে ২৮ ডিসেম্বর বাড্ডা থানায় মামলাও হয়। পাভেল জেল খাটলেও হাবিব শত্রুতা ভুলে যায়নি।

জেল থেকে বের হলে হাবিব পাভেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। তাজমুল মোটরসাইকেলযোগে পাভেলকে পল্লবীতে নিয়ে যায়। হাবিবের আপন ভাই হানিফ ও আনিছসহ কয়েকজন মিলে পাভেলকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় সরাসরি ছুরিকাঘাতে জড়িত তিনজনকে ডিবি মিরপুর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি থানা পুলিশও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে পল্লবী থানা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। পরে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মূল পরিকল্পনাকারী হাবিব।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার(এডিসি) মো. রাশেদ হাসান জানান, পাভেল হত্যায় এখনো দুজন পলাতক রয়েছে। পাভেল হত্যায় ব্যবহৃত আর.টি.আর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পাভেলকে তুলে নিয়ে আসা তাজমুল ও হাবিবের আরেক ভাই হানিফ এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

জেইউ/এসকেডি