বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (শিশু হাসপাতাল) লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন লাগার পর রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালটির বি ব্লকে আগুন লাগলেও তাড়াহুড়ো করে অন্যান্য ব্লক থেকেও রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালের নিচে নেমে আসেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরপর যখন জানতে পারেন আগুন লেগেছে, তখন সবাই তাড়াহুড়ো করে নিচে নামতে শুরু করেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এক রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম জানান, আগুন লাগার সময় তিনি জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। হঠাৎ আগুন লাগার খবরে দৌড়ে হাসপাতালে এসে দেখেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে এবং চতুর্দিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। পরে দ্রুতই তিনি তার রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের নিচে নেমে আসেন।

তিনি বলেন, শুনেছি এসি থেকে আগুন লেগেছে। এরপর সঙ্গে থাকা বেডের কাপড়ে আগুন লেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে যদি হুটহাট এভাবে আগুন লেগে যায়, তাহলে তো রোগীদের জন্য ভয়ের বিষয়। এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো অবশ্যই সবসময় নিরাপদ রাখা উচিত।

হাসপাতালের নিচে নেমে আসা হামিদুর রহমান জানান, কার্ডিয়াক বিভাগে তার বাচ্চা ভর্তি ছিল। জুমার নামাজ পড়ে এসে দেখেন ভবনটিতে আগুন। পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন তার বাচ্চাসহ ভর্তি থাকা সব বাচ্চাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে কার্ডিয়াক বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, আইসিইউর চিকিৎসক রুমে থাকা কম্পিউটার, প্রিন্টার, চেয়ার-টেবিলসহ সবকিছুই প্রায় আগুনে নষ্ট হয়ে যায়। রুমের দেওয়ালসহ সবকিছুতেই কালো ধোঁয়ার আস্তরণ পড়ে আছে।

কার্ডিয়াক বিভাগে কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রত্যেক বেড়েই রোগী ছিল। যখনই দুর্ঘটনা ঘটে আইসিইউতে মোট ১৭ জন রোগী ছিল। আগুন লাগার পর তাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অন্যান্য আইসিইউগুলোতে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আগুনে পুরো বেড, দেয়াল, এসি, ফ্রিজসহ রোগীদের অক্সিজেন সামগ্রী পুড়ে গেছে। যেগুলোর কোনটাই আর ব্যবহার উপযোগী নেই। যেগুলো ছিল, প্রায় সবগুলোই অন্তত দাহ্য পদার্থ। আগুন যদি ছড়িয়ে পড়ত, তাহলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি ছিল।

কর্তব্যরত এক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ধোঁয়া। এখান থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙে ধোঁয়া বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর মোটামুটি আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সবাই সুস্থ আছে। রোগীদের আমরা যথাযথভাবে নামিয়ে এনেছি।

আগুণের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।

টিআই/এসকেডি