দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এ অবস্থায় তীব্র গরম আর প্রচণ্ড রোদে নাজেহাল অবস্থা মানুষের। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। যারা বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হয়েছেন তারাও কাজ শেষে আবার দ্রুত ঘরে বা কর্মস্থলে ফেরার তাড়ায় রয়েছেন।

চলমান তাপপ্রবাহে রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থায় সবাই ঘরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করলেও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সে উপায় নেই। তপ্ত রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন তারা সড়কের মাঝে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হার মেনেছে তাদের দায়িত্বের কাছে। এ বিষয়ে কষ্ট কিংবা অভিযোগ নেই কারো। অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতো হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা।

সোমবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ধানমন্ডিসহ আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় সড়কে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য তুলনামূলক কম। সবকিছু যেন একপ্রকার থমকে আছে। তবে কর্মদিবস হওয়ায় সকাল থেকে সড়কে গাড়ির চাপ ছিল। সেজন্য যথারীতি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে।

এই তীব্র গরমের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার হচ্ছেন অনেকে। কপাল বেয়ে পড়ছে ঘাম, চেহারা হয়ে গেছে রোদে পোড়া তৈলাক্ত। কিছুসময় পরপর পানি পান করছেন তারা। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় বিশ্রামের সুযোগও পাচ্ছেন না। অধিকাংশ মোড়ে একসঙ্গে একাধিক সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আবার কিছু জায়গায় বিশ্রাম নিয়ে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন চলছে।

যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে অনেক জায়গায় আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন। তাদের অবস্থাও একই। গরমে ঘামে গলদঘর্ম অবস্থা সবার। রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় অনেককে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, যত কিছুই হোক দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। তীব্র তাপপ্রবাহে সারা দেশের মানুষের একই অবস্থা। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই আগুনের তাপের মতো ‘লু হাওয়া’ এসে গায়ে লাগছে। দায়িত্বের নিরিখে তপ্ত রোদেও সড়কে থাকতে হচ্ছে। এটি এমন এক দায়িত্ব, যেখানে সামান্য গাফিলতি করলে মুহূর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই রোদ, গরম সবকিছু মাথায় নিয়েই নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হচ্ছে।

মোর্শেদ হোসেন নামে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, বর্তমান তাপমাত্রা বাংলাদেশের ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এবারের গরমে বেশি কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় খুব বেশি দরকার না হলে রাস্তায় বের হচ্ছেন না কেউ। তবে আমাদের তো সেই সুযোগ নেই। একটু সময় যদি আমরা দায়িত্ব পালন না করি পুরো ঢাকায় যানজটের সৃষ্টি হবে।

নাঈমুল নামে আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, শুধু দায়িত্বের নিরিখেই রোদ মাথায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যেন এই গরমে সাধারণ মানুষকে যানজটের কারণে কোনো কষ্টে পড়তে না হয়। এছাড়া বেশি করে পানি পান করা, বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখছি।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুব আলম বলেন, তাপমাত্রা যতই হোক দায়িত্ব আমাদের পালন করতেই হবে। এ বিষয়ে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছি। এক্ষেত্রে ছাতা মাথায় দিয়ে যথাসম্ভব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো দেখভাল করছেন। গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ বিভিন্ন উপাদান ডিএমপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। বিশ্রাম নিয়ে পালাক্রমে সবাই ডিউটি করছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গাড়ির চাপ কিছুটা কম রয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আমরা রাস্তায় রয়েছি। কারণ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের কাজ। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্রামের জন্যও সময় দেওয়া হচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের স্বস্তি দিতে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি

প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে নগরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে নিরলস দায়িত্ব পালন করছেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। তাদের পেশাদারিত্ব ও মনোবল অটুট রাখতে পুলিশ প্রধান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার নির্দেশনায় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের একটু স্বস্তি দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যের জন্য সুপেয় পানির বোতল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত প্রভৃতি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাফিক বক্সে হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাপপ্রবাহের মধ্যেও সুস্থ থাকতে প্রত্যেক ফোর্সকে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে ব্রিফিং করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই মুহূর্তে উত্তপ্ত রোদে ইউনিফর্ম পরে পিচঢালা সড়কে দাঁড়িয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব একাগ্রচিত্তে পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এসময় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়াতে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে একদিকে ফোর্সের মনোবল যেমন চাঙ্গা হচ্ছে, অপরদিকে দাবদাহের মধ্যেও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসী পাচ্ছেন সর্বোত্তম সেবা।

ট্রাফিক রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোহেল রানা জানান, এই অসহনীয় গরমে রাস্তায় ডিউটি করা সত্যিই কষ্টকর। কমিশনার স্যার এই উপলব্ধি থেকে ট্রাফিকের পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা করেছেন, এজন্য স্যারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। স্যারের এই উদ্যোগ ট্রাফিকের সদস্যদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে।

সারা দেশে অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহ, বাড়বে অস্বস্তি : আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে মানুষের অস্বস্তিও আরও বাড়তে পারে।

তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আর পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আরএইচটি/এসএসএইচ