চট্টগ্রামে জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা ঘিরে চলছে উৎসবের আমেজ। নগরীর লালদীঘি মাঠে ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) হবে এবারের বলিখেলা। আর বলিখেলা ঘিরে শুরু হয়েছে বৈশাখি মেলা। তীব্র গরমেও চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের এই মেলার জৌলুস হারায়নি। লালদীঘির আশেপাশে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে বিভিন্ন দোকান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন মেলায়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় চুড়ি, খেলনার পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বাসাবাড়ির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্রও। 

দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মাটির তৈজসপত্র, খেলনা আর বাঁশ-বেত, মুড়ি-মুড়কি, গাছের চারা, ফুলঝাড়ু, হাতপাখাসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি ও লোকজ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বিকিকিনি শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র। মাটির তৈরি ঘর সাজানোর বিভিন্ন ধরনের আসবাব, শৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনার পুতুল, দা-বঁটি, ঘোড়া নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কয়েকজন দোকানি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত রোববার থেকে বিকিকিনি শুরু হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে এই মেলা। প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেসি দে রোড, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালি মোড়, জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে, জেল রোড ও লালদীঘি মাঠের আশেপাশে বসেছে শত শত দোকান। 

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ী মো. সিরাজ। প্লাস্টিকের ঢোলসহ শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়েছেন তিনি। ১৫ বছর ধরে এই মেলায় আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে এসেছি রোববার। তখন থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন প্রতিদিন বিক্রি বাড়ছে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মো. রাজিবও এসেছেন শিশুদের খেলনা, বাঁশি নিয়ে। চার বছর ধরে আসছেন এই মেলায়। গত বছর ৫৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে মেলায় এসেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, গত বছর ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি হয়েছে। এই বছর ৩৫ হাজার টাকার মাল নিয়ে এসেছি। দেখি কতটুকু বিক্রি করা যায়।

বগুড়া থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী মো. আজাহার। শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়েছেন তিনি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে শাবানা নিয়ে এসেছেন চুড়ি। তিনি বলেন, আমরা ঢাকার মেলাগুলো করি। ঢাকার বাইরে শুধু চট্টগ্রামে আসা হয়। এখানে বেচাকেনা ভালো হয়।

মেলায় আসা চাঁদপুরের মহামায়ার ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, ট্রাকে করে খাট এনেছি। প্রতি বছর আনা হয়। এখানে সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা দামের খাট আছে।

মেলায় আসা কলেজ শিক্ষার্থী ইমাম রানা বলেন, বাড়ির জন্য টুকটাক জিনিস কিনতে এখানে এসেছি। এখানে কম দামে সবকিছু পাওয়া যায়।

ক্রেতা নাজমা খাতুন বলেন, দুপুরে মানুষ একটু কম থাকে। রোদের কারণে আসলে বেশি ঘোরাঘুরি করতে ইচ্ছে করে না। ঘর সাজানোর ফুলের জন্য এসেছি। মেলার তিনদিন খুব ভিড় হবে ভেবেই আগে আগে এসেছি। তিনপিস সূর্যমুখী ফুল কিনেছি। আরো কিছু নেব। মাটির পণ্যও কিছু কিনব।

এদিকে কক্সবাজার থেকে এসেছেন মো. আকমল আলী। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনিও এ মেলায় অংশগ্রহণ করছেন। নানা রঙের হাত পাখা, ডালা, কুলা, ঝুঁড়ি, নিয়ে আসেন তিনি।

এসময় তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বেশি বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা। আমাদের কাছে চার রকমের হাতপাখা আছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে তালপাতার হাত পাখা। বাঁশের হাতপাখা প্রতি পিস ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, তালপাতার ১৫০ টাকা, কাপড়ের ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং প্লাস্টিকের কাগজের হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া কুলা আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০-৪০০ টাকায়। বাঁশের টুকরি বিক্রি হচ্ছে ৮০- ৩০০ টাকায়, খাঁচি ৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারি বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো বাংলাবর্ষের ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল লালদিঘির মাঠে বলিখেলা হবে। বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলিখেলার মঞ্চ (রিং) তৈরি করা হয়েছে। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা হচ্ছে মাঠের বাইরে। ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বলিখেলায় অংশগ্রহণ ইচ্ছুকদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। যারা অংশ নেবেন, তাদের জন্য এবার পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলিখেলার প্রবর্তন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বলিখেলার এবার ১১৫তম আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আরএমএন/জেডএস