৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ছিল পরীক্ষার সময়সূচি ও কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে পিএসসির নির্দেশনাটি পৌঁছেছে পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুরও ১৬ মিনিট পর।

এদিকে নির্ধারিত ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রের গেট বন্ধ করে দেওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি অসংখ্য শিক্ষার্থী।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সাড়ে ৯টায় দিকে রাজধানীর তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নির্দেশনা জটিলতায় অন্তত ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। তাদের দাবি, শেষ সময়ে কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কোনো সতর্কতা না দিয়েই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে বসা তানজিয়া শারমিন নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তিনি পিএসসি থেকে মোবাইলে পাঠানো পরীক্ষা বিষয়ক একটি নির্দেশনা দেখান, যা এসেছে সকাল ১০টা ১৬ মিনিটে।

তিনি বলেন, নির্দেশনায় বলা হয়েছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু সাড়ে ৯টার এই নির্দেশনা যদি ১০টার পর পরীক্ষা শুরু হলে আসে, তাহলে এই নির্দেশনা দিয়ে আমি কী করব?

তানজিয়া শারমিন বলেন, আমি ঠিক ৯টা ২০ মিনিটেই পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পৌঁছেছি। যেহেতু কিছু সময় বাকি আছে, তাই চাইছিলাম বাকি সময়টাতে একনজর রিভিশন দিই। গেটের পাশেই বসে শিটে চোখ বুলাচ্ছিলাম। কিন্তু ৯টা ৩০ মিনিটে দেখতে দেখতেই গেটটা বন্ধ করে দিল। আমার মতো এতগুলো শিক্ষার্থী যে গেটের বাইরে বসা, কর্তৃপক্ষ কোনো সতর্কতা বা নির্দেশনাও দেয়নি। ৯টা ৩১ মিনিটেও তাদের কাছে বারবার আকুতি জানিয়ে কোনো কাজ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমি এ পর্যন্ত অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগেও পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়। এখানে কোনো সতর্কতা দেওয়া হলো না, আবার পিএসসির মেসেজ কেন এলো ১০টা ১৬ মিনিটে। তাহলে এ দায় কী আমাদের? আমরা তো নির্ধারিত সময়েই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলাম।

কুমিল্লা থেকে ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শাউলিনা রহমান। ১৫ মিনিট আগেই উপস্থিত হলেও শেষ সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকতে পারেনি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি ৯টা ১৫ মিনিটেই এ এলাকায় চলে এসেছি। ঠিক ৯টা ৩১ মিনিটে রাস্তায় গেটের সামনে ছিলাম। সর্বশেষও আমি দেখলাম ঢুকতে দিচ্ছে, তখন আমি বাচ্চাটাকে এক পাশে বসিয়ে রেখে এসে দেখি গেট বন্ধ করে দিয়েছে।

শাউলিনা বলেন, মূল গেটের দেওয়াল টপকে দ্বিতীয় গেটে এসেছি কিন্তু এখান থেকেও ঢুকতে দেয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার রিকোয়েস্ট করার পরও ঢুকতে দেয়নি।

শুধু তানজিয়া শারমিন আর শাউলিনা রহমানই নয়, অন্তত ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজে শেষ সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যাদের এটাই ছিল জীবনের শেষ বিসিএস। শেষ স্বপ্নটা এভাবে ভেঙে যাওয়ায় অনেককে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতেও দেখা গেছে।

রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে যা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অন্যায়। কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা একঘেয়েমিতা দেখিয়েছে। নয়ত এক মিনিটের জন্য এতগুলো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যেত না। এক মিনিট তো মানুষের ঘড়ির কাঁটাও এদিক-সেদিক হয়। কিন্তু এখানকার কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অমানবিকতা দেখিয়েছে। তারা বুঝিয়েছে তারা খুবই পাওয়ারফুল।

তিনি বলেন, বিষয়টি যদি এতই কড়াকড়ির হতো তাহলে শেষ সময়ে কেন কেন্দ্রের সামনে মাইকিং করে বলা হলো না? পিএসসিও কি এই দায় এড়াতে পারে? আমার বোন পরীক্ষার হলে ঢুকে গেছে কিন্তু তার ফোনে পিএসসির মেসেজ এলো কিছুক্ষণ আগে। এটা কেমন দায়বদ্ধতা?

এদিকে পরীক্ষা শুরুর পর পিএসসির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আসা প্রসঙ্গে জানতে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে এর কিছুক্ষণ আগেই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে না পারা প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে পিএসসি চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নিয়মই ছিল ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা বারবার বলেছি, একটু সময় নিয়ে কেন্দ্রে আসবেন, ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। তারপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে না পারে, তাহলে আমাদের দৃষ্টিতে সে পরীক্ষার অযোগ্য।

এক মিনিটের জন্যও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করা যেত কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন এসে বলবে এক মিনিট, আরেকজন এসে বলবে পাঁচ মিনিট, এসব শুনলে তো আমার হবে না। তারপরও আমি ওই কেন্দ্রে কথা বলে দেখছি কী করা যায়।

টিআই/এসএসএইচ