সড়কে গাড়ির চাপ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ দুদফা শেষে তৃতীয় দফায় পড়েছে। বিধিনিষেধের শুরুর দিকে জনসমাগম ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যে সরব ভূমিকা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। 

চেকপোস্টগুলোতে শুরুর দিকে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পোড়ার মতো হলেও এখন তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। আর কোথাও কোথাও তো চেকপোস্টই গায়েব হয়ে গেছে। মুভমেন্ট পাস নিয়ে বিধিনিষেধের শুরুতে যে কড়াকড়ি ছিল তা এখন আলোচনা থেকে বহু দূরে। এখন মুভমেন্ট পাস চেক করতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও চলছে মুভমেন্ট পাস চেকিং। কিন্তু পিক-আওয়ারে সব গাড়িকে একসঙ্গে ধরে চেক করা সম্ভব হচ্ছে না।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর সাত মসজিদ রোড, মিরপুর রোড, এলিফ্যান্ট রোড, বকশি বাজার মোড় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি চেকপোস্টেই নীরব ভূমিকায় রয়েছে পুলিশ। ধানমন্ডির শংকরে চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিই চোখে পড়েনি। আবাহনী মাঠের সামনের চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও রয়েছেন নীরব ভূমিকায়।

সিটি কলেজের সামনের চেকপোস্টে শুধুমাত্র দুজন পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রাসেল স্কয়ারের চেকপোস্ট আর নেই। শুরুর দিকে আলোচনায় থাকা এলিফ্যান্ট রোডের চেকপোস্টটিও যেন ঠান্ডা হয়ে গেছে। বকশিবাজার মোড়েও দেখা গেছে একই চিত্র।

রাস্তায় কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিকে পুলিশ ব্যাপক চেকিং করত, যেন তাদের অতিক্রম করাই ছিল দুঃসাধ্য কাজ। কিন্তু কয়েকদিন ধরে রাস্তায় পুলিশ আর কিছু বলছে না। রাস্তায় দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আর পুলিশে যেন নীরব হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি চেকপোস্ট থেকে পুলিশের এক সদস্য জানিয়েছেন, কারণ থাক বা না থাক, মানুষ রাস্তায় বের হবেই। অনেকে বুঝেনই না মুভমেন্ট পাস কী। আবার যারা বুঝেন, তাদের অনেকে নেন না। উল্টো আমাদের সঙ্গে তর্ক করেন। জনগণের সহযোগিতা করার মনোভাব নেই বললেই চলে। এমন একটা দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে তো আমরা সবাই চেষ্টা করছি। যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে কথা বলে কতক্ষণ? আপনি তো বুঝেনই সব।

রাসেল স্কয়ারের সামনের চেকপোস্টের চিত্র

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আফসানা মালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অফিসের প্রয়োজনেই বাসা থেকে বের হতে হয়। শুরুর দিকে মুভমেন্ট পাস নিয়েই বাসা থেকে বের হতাম। বেশ কয়েকদিন মুভমেন্ট পাস নিয়েছি, পুলিশ রাস্তায় চেকও করেছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে পুলিশ আর কিছু বলছে না। আমি প্রতিদিনই মোহাম্মদপুর থেকে এলিফ্যান্ট রোডে যাই। সেক্ষেত্রে শংকর, সিটি কলেজের সামনে এবং এলিফ্যান্ট রোডের চেকপোস্ট অতিক্রম করতে হয়। আগে সব জায়গায় দাঁড়াতে হতো। এখন আর দাঁড়াতে হয় না। সবাই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।

চেকপোস্টে চেকিং ঢিলেঢালাভাবে চলছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের ধানমন্ডি জোনের এসি জাহিদ আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এখনো লকডাউন চলমান, সেহেতু আমাদের চেকপোস্ট এখনও কার্যকর আছে। রাস্তায় গাড়ির চাপ এখন অতিরিক্ত। পিক আওয়ারে যদি সবগুলো গাড়ি একসঙ্গে চেক করতে যাই, তাহলে রাস্তায় মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে। যার ফলে ওই সময় যাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে যে জরুরি প্রয়োজনে বের হননি, তাদেরকে আমরা শুধু চেক করছি।

ট্রাফিক বিভাগের রমনা জোনের এসি মো. রেফাতুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার থেকে রাস্তায় গাড়ির তীব্র চাপ। চেকপোস্টগুলোতে চেক করে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। সব গাড়ি যদি চেক করতে যাই, তাহলে রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়বে। সব গাড়ি চেক করতে গিয়ে হয়তো ৪০ থেকে ৫০টা মামলা হবে, তাতে কিছুই হবে না। উল্টো লোকজন ভোগান্তিতে পড়বে। মোটামুটি অনেক গাড়ি রাস্তায় বের হয়েছে। যারা বের হচ্ছেন, প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কারণ আছেই।

এমএইচএন/আরএইচ