নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী মারা গেলে কিংবা গুরুতর অসুস্থ হলে তার বদলি হিসেবে অন্য কাউকে হজ করার বিধান রয়েছে। যাকে রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) কোটা বলা হয়। এক সময় সেই কোটা ৪ শতাংশ ছিল। সেই কোটা ৪ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের দাবিতে এক সময় আন্দোলন করছিল হজ এজেন্সিগুলো। করোনার পর হজযাত্রী কমতে থাকায় সেই কোটা ১০ শতাংশ করা হয়। এবার সেই কোটা ২০ শতাংশে উন্নীত করল ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিন বছরে হজ খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। হজের খরচ বাড়ার পাশাপাশি করোনার পর টানা অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, সংঘাত। এই টালমাটাল পরিস্থিতি আগামীতে হজযাত্রী সংখ্যা আরও কমতে পারে এমন শঙ্কায় হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়তে নতুন নতুন কৌশল নিয়েছে সৌদি সরকার ও বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে প্রতিস্থাপন কোটা ২০ শতাংশ উন্নীত করা হলো। তবে এ কোটা বাড়ানোয় হজ নিবন্ধনে ফের বিশৃঙ্খলায় তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছে, প্রতিস্থাপন কোটা বাড়ার পর আগের মতো কিছু এজেন্সি ভুয়া নাম, পাসপোর্ট ব্যবহার করে হজযাত্রী নিবন্ধন করবে। এরপর নিবন্ধিত হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিংবা মারা গেছে জানিয়ে অন্য কাউকে হজ করার জন্য সৌদি আরবে পাঠানোর চেষ্টা করবে। আবার শেষ সময়ে হজে পাঠিয়ে কিছু এজেন্সি আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিস্থাপন কোটা ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হঠাৎ করে ১০ শতাংশ কোটা বাড়ানোর সঠিক কারণ বলা হয়নি। তবে এ কোটা পূরণ করতে গিয়ে কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে অজ্ঞাতসারে নাম নিবন্ধন করা হলে এবং তার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই কোটা সাময়িক সময়ের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিস্থাপন কোটা মূলত নির্দিষ্ট একটি সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা। কারণ এটি কেবল ব্যবহৃত হয় যখন প্রাক বা চূড়ান্ত নিবন্ধন করার পর কোনো হজযাত্রী মারা যান কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে বদলি হজযাত্রী নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এটা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। ২০ শতাংশ করার মানেই এখানে অন্য কোন কারণ আছে। হজ এজেন্সিগুলোর চাপে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। কারণ নিবন্ধিত কোন হজযাত্রীর হজে না গেলে তার টাকা ফেরত দিতে হয় এজেন্সিকে। এজেন্সির এসব দিক বিবেচনা করে প্রতিস্থাপন কোটা বাড়ানো হয়েছে।

এখনও ভিসা হয়নি প্রায় অর্ধেক হজযাত্রীর

হজযাত্রীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোরে ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে  প্রথম ফ্লাইট। বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া  এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এই তিনটি এয়ারলাইন্স নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে। তবে এখনো ভিসা হয়নি অর্ধেকের বেশি হজযাত্রীর।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ৮৩ হাজার ৩১১ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৪১৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন পবিত্র হজ পালনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। বৃহস্পতিবার ( ৯ মে) পর্যন্ত হজে যেতে ভিসা পেয়েছেন ৪৪ হাজার ২২৬ হজযাত্রী। অর্থাৎ ৩০ হাজার ৮৫ জনের এখনো ভিসা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজ এজেন্সিগুলো বাড়ি ভাড়া করতে গাফিলতি করেছে। কম রেটে বাড়ি ভাড়া করার জন্য প্রতিবার শেষ সময়ে এসে বাড়ি ভাড়া করে তারা। এবারও তাই করেছে। এবার এটা করতে গিয়ে নতুন আইনের ফাঁকে পড়ে যায় হজ এজেন্সিগুলো। বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত এজেন্সি প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের ভিসা আটকে দেয় সৌদি সরকার। ফলে হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি আরবে যেতে পারেননি তারা। এ জায়গায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েও পায়নি বলে অভিযোগ করছে এজেন্সিগুলো।

বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীদের ভিসা না হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেছেন, এখনো অনেক হজ এজেন্সি মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। এছাড়াও বেশকিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে। যার ফলে ভিসা করা সম্ভব হয়নি।

টিকিট বুকিং হয়নি অর্ধেক হজযাত্রীর

চলতি বছর ৮৩ হাজার ৩১১ জন হজযাত্রী, হজ গাইড, মোয়াল্লেমসহ এবার সৌদিতে যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। হজযাত্রীসহ সবাইকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ২২৮ হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। সে অনুযায়ী শিডিউল ঘোষণা করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি হজযাত্রী বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার।

চুক্তি অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মোট ১১৮টি ফ্লাইটে ৪৮ হাজার ৮৩৫জন হজযাত্রী বহন করবে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বুকিং হয়েছে মাত্র ৩৯ শতাংশ। বাকি ৬১ শতাংশ সিট এখনও বুকিং হয়নি। তবে সৌদি এয়ারলাইন্স এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। এই এয়ারলাইন্সে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৯১ শতাংশ সিট বুকিং হয়ে গেছে আর ফ্লাইনাস এয়ার বুকিং হয়েছে ৫৫ শতাংশ। তিনটি এয়ারলাইন্স বুকিং অনুযায়ী এখনও অর্ধেক হজযাত্রীর টিকিট বুকিং দেওয়া হয়নি। টিকিট বুকিং না হওয়ার জন্য হাজীদের ভিসা না হওয়া অন্যতম কারণ বলছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের দ্রুত সময়ে ভিসা না করাতে পারলে প্রতিদিন বাড়বে ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা। গত বছরও একই অবস্থা তৈরি হয়েছিল।

শিডিউল অনুযায়ী, ৯ মে প্রথম দিন তিনটি এয়ারলাইন্সের ৭টি ফ্লাইটে ২ হাজার ৭৮৫ জন হজযাত্রীর সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চারটি ফ্লাইট ইতোমধ্যে সৌদিতে পৌঁছেছে। বাকি তিনটি সৌদির উদ্দেশ্য বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা ছাড়ে। 

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী হজ পালন করবেন। বৃহস্পতিবার থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এর আগে বুধবার (৮ মে) চলতি বছরের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এনএম/এসকেডি