দেশের সব রাসায়নিক গুদাম ও কারখানাকে পরিকল্পনা ও আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছেন পরিকল্পনাবিদরা

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘সমসাময়িক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পুরান ঢাকাসহ দেশের সব স্থানে অনুমোদনহীন ও বেআইনিভাবে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা স্থাপনকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে মানুষের জীবন রক্ষার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে ঢাকা সাবওয়ে নির্মাণের মতো মেগা প্রকল্প নেওয়ার আগে রাজধানী ঢাকা ও বাংলাদেশের পরিকল্পনাগত ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা মাথায় রেখে বিভিন্ন বিকল্পকে মাথায় রেখে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

তারা বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমাদের উন্নয়ন দর্শন ও পরিকল্পনায় প্রথাগত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধারণাকে প্রাধান্য না দিয়ে সামাজিক সুবিধাদি যথা স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতিতে সার্বজনীন অভিগম্যতা বাড়ানো উচিত এবং সকল নাগরিককে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বিআইপির পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম ও কারখানাগুলোর অধিকাংশই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও আদর্শগত মান অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি এবং অনুমোদনহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় কেমিক্যাল শিল্প পার্ক বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

শিল্প পার্ক বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান হিসেবে পুরান ঢাকায় যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা রাসায়নিক গুদামগুলোকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য পাঁচটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয় বিআইপির পক্ষ থেকে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রথমত, অধিক বিপজ্জনক রাসায়নিক গুদামগুলোকে অনতিবিলম্বে সরকারি-বেসরকারি শিল্প এলাকায় স্থানান্তর করবার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, তুলনামূলক কম বিপজ্জনক রাসায়নিক গুদামকে পুরান ঢাকার সুনির্দিষ্ট কিছু ভবনের মধ্যে স্থানান্তর করে আশু ঝুঁকি কমানো যায় কি না সে বিষয়েও পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ করা একান্ত প্রয়োজন। 

তৃতীয়ত, আবাসিক ভবনে মিশ্র ব্যবহারের নামে রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা কোনভাবেই অনুমোদন দেওয়া যাবে না এবং অনতিবিলম্বে আবাসিক ভবন থেকে সকল রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা সরাতে হবে। চতুর্থত, রাসায়নিক উপাদান উৎপাদন, বিপণন, বিক্রি ও গুদামজাত করার বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। 

পঞ্চমত, পুরান ঢাকার বাইরে টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে যেসব রাসায়নিক গুদাম আছে, সেগুলোকে নজরদারির আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকার সাবওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ সম্পর্কে বিআইপির পক্ষ থেকে পরিকল্পনাবিদরা বলেন, সেতু কর্তৃপক্ষের সাবওয়ে সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রকল্প প্রধানত কারিগরি সমীক্ষা। এই ধরনের সাবওয়ে প্রকল্পের কোনো দিকনির্দেশনা আমাদের বর্তমান কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা, আরএসটিপি কিংবা ঢাকা শহরের মহাপরিকল্পনা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় নেই। 

বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ রাসেল কবির বলেন, নগর পরিকল্পনার মূল দায়িত্ব সেতু কর্তৃপক্ষের না হওয়ায় সাবওয়ে প্রকল্প প্রণয়নে অন্যান্য নগর ও পরিবহন পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার জন্য শহরে এলাকাভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিআইপির সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে শুধুমাত্র দারিদ্র্য দূরীকরণে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, বিনোদন সুবিধা প্রভৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা উচিত, যার সুফল দেশের সকল নাগরিক পেতে পারেন।

এএসএস/আরএইচ