মাদারীপুরের শিবচরে কাঁঠালবাড়ি পুরাতন ঘাটে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৫ জন আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি ও নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সোমবার (৩ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও এত বেশি সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট চলাচলের জন্য ঘাট ইজারাদার, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিআইডাব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর কেউ দায় এড়াতে পারেন না। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ঘাটে মনিটরিংয়ের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করার দাবি জানান তিনি। 

আরও পড়ুন : স্পিডবোট-বাল্কহেড সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬

দেশের নৌ-পথ দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার নৌ-পথের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও এ খাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে নৌ-পথের যাত্রীদের নিরাপত্তা বরাবরই উপেক্ষিত হচ্ছে। একদিকে লকডাউন ও অন্যদিকে কালবৈশাখীর দুর্যোগপূর্ণ মৌসুমে ৮-১০ জন যাত্রী যাতায়াতের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেটবিহীন ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াতের ঘটনায় সারাদেশে নৌ-পথের মনিটরিংয়ে অবহেলার চিত্র ফুটে উঠেছে।

নৌ-পথে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব অবহেলায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ও আহতদের ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত নৌ-পথে ৬০১টি ছোট-বড় দুর্ঘটনায় ৭৭৩ জন নিহত, ৯১২ জন আহত ও ১ হাজার ১৬৬ জন নিখোঁজ হয়েছে।

পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ১৫৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত, ২৩৪ জন আহত ৩৮৭ জন নিখোঁজ হয়। ২০১৯ সালে ২০৩ টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১৯ জন নিহত, ২৮২ জন আহত ও ৩৭৫ জন নিখোঁজ হয়।

২০২০ সালে লকডাউনের মধ্যেও ১৮৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩১৩ জন নিহত, ৩৪২ জন আহত ও ৩৭১ জন নিখোঁজ হয়।

চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ১৭টি ছোট-বড় নৌ-দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত, ১৩ জন আহত, ১১ জন নিখোঁজ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫ টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১৯ জন আহত, ১৭ জন নিখোঁজ হয়। মার্চ মাসে ১০টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত, ১৩ জন আহত, ৩ জন নিখোঁজ হয়। লকডাউনে এপ্রিল মাসে ১৪টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত, ৯ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।

জেইউ/এইচকে