করোনা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এ অবস্থায় ঈদ সামনে রেখে খোলা থাকা মার্কেট ও দোকানপাটে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হলেও অনেকেই তা মানছেন না। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মানাতে অভিযানে নেমেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

মঙ্গলবার (৪ মে) দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনা করে ১৭ জনকে জরিমানা করেছে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযানে কারও নাকের নিচে, কারও হাতে, কারওবা থুতনিতে মাস্ক থাকায় মোট সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল ইসলাম পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিন বেলা ১২টায় ডিএমপির দুজন ম্যাজিস্ট্রেট বসুন্ধরা ও নিউমার্কেট এলাকায় একযোগে অভিযান শুরু করেন। বসুন্ধরার নিচ তলায় পূর্ব পাশ থেকে অভিযান শুরু করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল ইসলাম।

বসুন্ধরা শপিংমলের পূর্ব পাশে অভিযান শুরুর পরই নাকের নিচে মাস্ক পরে ঘোরাফেরার সময় নিশাদ নামে এক দোকান কর্মচারীকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরই নিচ তলার ওই অংশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তখন শপিংমলের অন্যান্য ফ্লোরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। 

অভিযান চলাকালে দেখা যায়, দোকানের সামনে যাওয়া মাত্রই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছিল। এক রকম অন্ধকারের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করেন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল ইসলাম। 

অভিযান চলাকালে শাওমির মোবাইল শো রুমে মাস্ক না পরেই কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলছিলেন কর্মচারী আহসান। বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আসায় তাকে ৫০০ টাকা জরিমানার আদেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দোকানে কর্মচারী না থাকায় কোরআন শরীফ পড়ছিলেন ইমরান ফ্যাশনসের কর্মচারী আলী হোসেন। তবে তখন তার মুখে মাস্ক ছিল না। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও জরিমানা থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। তাকে ১০০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শুধু বিক্রেতাদের নয়, বসুন্ধরা শপিং সিটি শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে এসে হাতে ও থুতনিতে মাস্ক নিয়ে ঘোরাফেরা করায় জরিমানা করা হয় সাত জন ক্রেতাকে।

মো. ওয়ারেশ নামে গৃহকর্তা স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসেন। তার স্ত্রীর মুখে মাস্ক না থাকায় ২০০ টাকা জরিমানা গুণতে হয় তাকে।

পরে তার স্ত্রী রোখসানা বলেন, পুরো মার্কেটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ভ্যাপসা গরম। মুখে মাস্ক রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। যখনই মাস্ক খুলে হাতে নিয়েছি তখনই ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেছে।

দ্বিতীয় তলার হোলসেল মার্কেটে মুখে মাস্ক না পরা ক্রেতাদের ঢুকতে দেওয়ার অপরাধে কর্মচারী সাদিক ও একই অপরাধে সোগোর মালিক সাইফুল ইসলামকে ১০০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার (৩ মে) থেকে মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়। আজকের অভিযানের উদ্দেশ্য জরিমানা নয়, মূলত করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নই লক্ষ্য।

অভিযানে দেখা যায়, অনেকেই মাস্ক পরছেন না, পরলেও কারও নাকের নিচে, কারও থুতনি কিংবা হাতে। এতে করে তারা নিজে যেমন করোনার ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, খোদ বিক্রেতারাও অনেকে মাস্ক পরছেন না। এজন্য ক্রেতা-বিক্রেতা মিলে ১৭ জনকে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারা অনুযায়ী সাড়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই মার্কেট ও দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত দেওয়া হলেও অনেকের মাঝেই এ ব্যাপারে অনীহা দেখে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের বিষয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গতকাল (রোববার) মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটা মিটিং হয়েছে। সেখানে সুপারিশ করা হয়, আজ সেই বিষয়ে ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত দিয়েছে- আজ থেকে পুলিশ, সিটি করপোরেশন, ম্যাজিস্ট্রেট ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দেশের প্রত্যেকটি মার্কেট সুপারভাইজ করবে। মার্কেটে এত লোক হয়ত কন্ট্রোল করা যাবে না। কিন্তু মাস্ক ছাড়া যদি বেশি লোকজন ঘোরাফেরা করে প্রয়োজনে আমরা সেসব মার্কেট বন্ধ করে দেব। ক্লিয়ারলি এটা বলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দোকান-মালিক সমিতির সভাপতিরা আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তারা নিজেরাও এটা সুপারভাইজ করবেন।

জেইউ/এসএসএইচ