১৬ এ‌প্রিল কালিহাতী‌তে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে পেছন থেকে আরেকটি ট্রাক ধাক্কা দিলে তিন শ্রমিক নিহত হন

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এপ্রিল মাসজুড়ে বিধিনিষেধ জারি ছিল। অন্য সময়ের তুলনায় কম ছিল যানবাহন চলাচল। তারপরও কমেনি সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ। ওই মাসে দেশজুড়ে ৩৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫২ জন নিহত ও ৫১৯ জন আহত হয়েছেন। সে হিসেবে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে নিহত হয়েছেন ১৫.০৬ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

বুধবার (৫ মে) ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে নারী ৫৪ জন, শিশু ৪৭ জন। মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ১৪৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫৮ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৯৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭.৫৩ শতাংশ। এছাড়া দুর্ঘটনায় ৯৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২১.২৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৩ জন যা মোট নিহতের ১৬.১৫ শতাংশ।

সংগঠনটি জানায়, গত মার্চ মাসে ৪০৯টি দুর্ঘটনায় ৫১৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ওই মাসে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিলেন ১৬.৫৪ জন। এপ্রিলে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৫.০৬ জন। এই হিসেবে এপ্রিল মাসে প্রাণহানি কমেছে ৮.৯৪ শতাংশ। প্রাণহানি কমার এই হার কোনোভাবেই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। বিধিনিষেধের মধ্যে সারাদেশে যাত্রীবাহী বাস বন্ধ এবং মানুষের যাতায়াত যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রিত ছিল। তারপরেও দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির এ হার চরম উদ্বেগজনক। এ সময়ে মোট ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন এবং ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছে। 

দুর্ঘটনায় যেসব যানবাহন দায়ী 

ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ৩১.৬৬ শতাংশ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি ৭.২৯ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ, পাজেরো ৫ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৩.০৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮.৫৯ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান, টেম্পু, মিশুক, স্কুটার) ১৫.৯৩ শতাংশ, নসিমন, ভটভটি, আলমসাধু,পাখিভ্যান, টমটম, মাহিন্দ্র, বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা ও ভ্যান ৭.৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য (মাটিকাটা ট্রাক্টর, রোড রোলার,পাওয়ারটিলার, ইটভাঙা মেশিন গাড়ি) ০.৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ 

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। 

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা ও বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অন্যতম। 

এসআর/এসকেডি