মহিলা বিষয়ক অধিদফতর/ ছবি: সংগৃহীত

২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে ২০১৮ এর মাঝামাঝিতে আড়াই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে প্রকল্পের মেয়াদ পার হলেও এখন পর্যন্ত এর আওতায় গাড়ি কেনা এবং জনবল নিয়োগ ছাড়া আর কোনো কিছুই হয়নি। আড়াই বছরে অগ্রগতি মাত্র পাঁচ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর।

বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পের কর্তাদের নিয়ে একটি সভাও করেছে।

তবে প্রকল্পের এমন ‘বেহাল দশা’র বিষয়ে করোনা ও কর্মকর্তাদের বদলি এবং অবসরকে দায়ী করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। 

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একটি করে মোট চার হাজার ৮৮৩টি (চার হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন ও ৩৩০টি পৌরসভা) কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা। এর মাধ্যমে চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ জন কিশোর-কিশোরীকে সুবিধা দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৯৪৬ জন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ ছিল ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছিল ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ অর্থবছরে বরাদ্দকরা অর্থের মধ্যে ২০২০ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থের ৫২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এখনও ব্যয় হয়নি।

আইএমডির সভায় প্রকল্প কর্তারা জানান, প্রকল্প পরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগে বিলম্ব হয়েছে। প্রথম প্রকল্প পরিচালক কিছুদিন কাজ করার পর অবসরে যান এবং পরবর্তী সময়ে দুজন উপ-প্রকল্প পরিচালক অন্যত্র বদলি হয়। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ক্লাব কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে চালু করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে এ প্রকল্পের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জয়ন্ত কুমার সিকদার (যুগ্ম-সচিব) বলেন, ‘প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় কিছু কেনাকাটা করা হয়েছে। বাকি কাজ করোনাভাইরাসের জন্য বন্ধ রয়েছে।’

প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলেও এই সময়ে বাকি কাজ করা সম্ভব হবে কি না- জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব বাকি কাজ করার। কিন্তু কতটুকু পারব সেটা বলতে পারছি না। এর বাইরে আপনি অফিসে এলে আমি বিস্তারিত জানাতে পারব।’

আইএমইডির সভার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কিছু জানায়নি। তাদের প্রতিবেদনের ওপর পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রকল্পে গাড়ি কেনা আর জনবল নিয়োগ ছাড়া কোনো কাজ করা হয়নি। প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছি। সেখানে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এত কম কেন- সেটি জানতে চেয়েছি। তারা বিভিন্ন কারণ উপস্থাপন করেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষে প্রকল্পের অগ্রগতি এতো কম কাম্য নয়। যথাসময়ে প্রকল্প শেষ না হলে সরকারি অর্থ অপচয়সহ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীরা উপকার থেকে বঞ্চিত হয়।’

উল্লেখ্য, সারাদেশে ক্লাব প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, জন্মনিবন্ধন, বিবাহ নিবন্ধন, যৌতুক, ইভটিজিং, শিশু অধিকার, নারী অধিকার, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন, পরিবার পরিকল্পনা, মাদকাসক্তি, নারীপাচার, শিশুপাচার, আইনি সহায়তা, এইচআইভি/এইডস, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর কিশোরীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।

প্রতিটি ক্লাবের সদস্য সংখ্যা থাকবে ৩০ জন। এর মধ্যে ২০ জন মেয়ে এবং ১০ জন ছেলে। এছাড়া সকল ক্লাবের সদস্যরা বিভিন্ন দিবস উদযাপন, খেলাধুলা, বই-ম্যাগাজিন, সঙ্গীত, আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, মুক্ত আলোচনা, আন্তঃক্লাব প্রতিযোগিতা ও কারাতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।

এসআর/এফআর