থাইল্যান্ডের ব্যাংকক সাফারি ওয়ার্ল্ডের আদলে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি লেকে ডলফিন শো দেখানো হবে পর্যটকদের। জাতীয় চিড়িয়াখানায় আগতদের চিত্তবিনোদনে চিড়িয়াখানার ১৩ হেক্টরের দুটি লেক ব্যবহার করে ডলফিন শোর আয়োজন করতে চায় কর্তৃপক্ষ। 

জাতীয় চিড়িয়াখানা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরির যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেটি শেষ হলেই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডলফিন শোর এ আয়োজন করা হবে। বর্তমানে চিড়িয়াখানার মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজটি করছে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মো. আবদুল লতিফ।

তিনি বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা নিয়ে একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। মাস্টার প্ল্যানটি যখন বাস্তবায়ন হবে, তখন চিড়িয়াখানার আমূল পরিবর্তন হবে। এই চিড়িয়াখানাকে আমরা পাঁচটি ভাগে ভাগ করব। ভাগ হওয়ার পর সেখানে বাংলাদেশ হ্যাবিটেট নাম দিয়ে সুন্দরবনকেন্দ্রিক প্রাণীগুলো এক জায়গায় রাখব। আফ্রিকান হেরিটেড অথবা ওকাভান্ডা হেরিটেড নাম দিয়ে আফ্রিকান ও অস্ট্রেলিয়ান যে প্রাণীগুলো আছে, সেগুলো একটি জোনে রেখে ভাগ করব।

নাইট সাফারির কথাও চিন্তা করা হচ্ছে জানিয়ে ড. মো. আবদুল লতিফ বলেন, নাইট সাফারিতে কিছু পিট অ্যানিমেল রাখবো। সেখানে বেক অব হাউজ থাকবে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং স্টোর থাকবে, গ্যারেজ থাকবে, অফিসে যাতায়াতের জন্য আলাদা রোড থাকবে। চিড়িয়াখানার পুরো বাউন্ডারিটি পাইলিং সিস্টেমের মাধ্যমে করা হবে। এর ফলে সেখান থেকে বাইরের কোনো সুয়ারেজ চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া বাফার জোন এবং ওয়াকওয়েও থাকবে।

মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে দুটি লেক আধুনিকায়নের বিষয়টিও রয়েছে জানিয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, আমরা চিন্তা করছি মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে চিড়িয়াখানার লেক দুটিকে আধুনিকায়ন করব। এখানে সাউন্ডলেস কয়েকটি বোট দিব। ভাসমান কিছু রেস্তোরার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানার দুটি লেকে ডলফিন শো করার ভাবনা আছে। এটি হলে দর্শনার্থীরা এসে ডলফিন শো দেখতে পারবেন। 

ডলফিন শোটি ব্যাংককের সাফারি ওয়ার্ল্ডের আদলে তৈরি করা হবে। পাশাপাশি আমাদের চিড়িয়াখানায় বার্ড শো করার জন্যও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। রোপওয়ে, ট্রাভেলকারের কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের জুনে যখন মাস্টার প্ল্যানটি হাতে পাব, তখন প্রকল্পের মাধ্যমে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে- বলেন তিনি।

পরিচালক বলেন, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে পুরো চিড়িয়াখানার চিত্র পরিবর্তন হয়ে যাবে। তখন চিড়িয়াখানার দুটি গেট করা হবে। আমাদের দেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এ ধারা অব্যাহত রেখেই চিড়িয়াখানার উন্নয়ন করা হবে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড কোম্পানি আমাদের চিড়িয়াখানার মাস্টারপ্ল্যানটি তৈরি করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. মো. আবদুল লতিফ বলেন, সাত মাস আগে আমি যখন চিড়িয়াখানায় যোগ দিই, তখন থেকেই একটি চিন্তা ছিল ভালো কিছু করব। কারণ এর আগে আমার চিড়িয়াখানায় কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে এই ডিপার্টমেন্টে আমি গত ৩০ বছর যাবৎ কাজ করছি, সে হিসেবে চিড়িয়াখানার বিষয়ে আমার আইডিয়া ছিল কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল না। 

তিনি বলেন, খবরের কাগজে দেখতাম যে, চিড়িয়াখানায় নোংরা ও দুর্গন্ধে ভরা, প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্যের খারাপ, পর্যটকরা এসে সেবা পেতেন না। এর মধ্যে কিছু প্রোপাগান্ডাও ছিল, আবার কিছু সত্যতাও ছিল। আমি এখানে আসার পরে তিন-চারটি বিষয়ের ওপর জোড় দিয়েছি। প্রয়োজন অনুযায়ী জাতীয় চিড়িয়াখানার লোকবল সীমিত। আমি চিড়িয়াখানার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে একটা টিম স্পিরিট বাড়িয়েছি। দ্বিতীয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে জোড় দিয়েছি। তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর দিয়েছি। প্রত্যেকটি প্রাণীকে ঠিকঠাকভাবে খাবার দিয়েছি।

চিড়িয়াখানার প্রাণীদের সার্বিক বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই কমিটি বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলোর চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেছে। ওই অভিজ্ঞতা থেকে কোন প্রাণীকে কী ধরনের খাবার দেওয়া হয়, সেটি পর্যালোচনা করে তারা একটি আন্তর্জাতিক মানের তালিকা করে দিয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রাণীগুলোকে খাবার দেওয়া হয়। প্রত্যেক প্রাণী ঠিকমতো খাবার পেলে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলে এদের ইমিউনিটি বাড়বে। ইমিউনিটি বেড়ে গেলেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ঠিকমতো খাবার দেওয়ার ফলে বর্তমানে প্রতিটি প্রাণীর স্বাস্থ্য আগের তুলনায় অনেক ভালো আছে।

এসআর/আরএইচ