বৈধ আইনি কাঠামো অনুসরণ না করে নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে নদী দখল হচ্ছে। নদী দূষণকারীরা তাদের আবর্জনা ফেলে দিচ্ছে নদীতে। ফলে জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার মতো কোনো অক্সিজেন নদীর পানিতে থাকছে না। বুড়িগঙ্গার দুষণের অর্ধেকই হয় হাজারীবাগের দুই শতাধিক ট্যানারি কারখানা এবং শ্যামপুরের এক শতাধিক ডাইং কারখানার কারণে। 

বৃহস্পতিবার (৬ মে) ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কনসোর্টিয়াম’ এর দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজন করা হয়।

অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন জো অ্যান ওয়্যাগনার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এটি সঞ্চালনা করেন কনসোর্টিয়াম প্রধান এবং ব্লু প্যানেট ইনিশিয়েটিভ এর নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিল। 

এই দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প ঢাকা শহরের বায়ু এবং শব্দদূষণসহ বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌযান কর্তৃক দুষণ, ডাইং কারখানা কর্তৃক দূষণ এবং ট্যানারি দূষণ মোকাবিলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে একত্রে পরীবিক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার। নদীগুলোর বেশিরভাগই দূষণে জর্জরিত হয় শিল্পকারখানার মাধ্যমে। শিল্পকারখানাগুলো আবার অর্থনীতি আর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিল্পকারখানাগুলোতে ইটিপি স্থাপন ও পরিচালনা করতে হবে, নয়তো তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সুলতানা কামাল বলেন, ঢাকার দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ইভিডেন্সভিত্তিক অ্যাডভোকেসি করবে। পানি, বায়ু এবং শব্দদূষণের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে সর্বোপরি বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সব অংশীজন হাতে হাত ধরে কাজ করবে।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। ঢাকা শহরের পানি, বায়ু আর শব্দ দূষণের জন্য যে দুর্নীতিগুলো হয় সিটি করপোরেশন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। পানি দূষণ বন্ধে প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। দূষণের সূত্রপাত যেখানে সেখানেই রোধ করতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে গাছ লাগাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে পরিবেশবান্ধব সুন্দর ঢাকা নগরী।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন জো অ্যান ওয়্যাগনার বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি হচ্ছে সবচেয়ে বিপজ্জ্বনক একটি ইস্যু। মার্কিন সরকার এই ইস্যুতে কাজ করতে পেরে খুশি। এই দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পে সহায়তার দ্বারা মার্কিন সরকার কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ঢাকা শহরের পানি, বায়ু ও শব্দদূষণ কমিয়ে আনতে নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, মিডিয়া এবং অন্যান্য অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেবে। একমাত্র যৌথ অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমই পারে প্রকল্পের সুফল বয়ে আনতে।
 
এমএইচএন/আরএইচ