ক্রেতাশূন্য মার্কেট, চালান তোলা নিয়ে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের
রোজার ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি। তারপরও মার্কেটে ভিড় নেই ক্রেতাদের। অলস সময় পার করছেন দোকানদার ও কর্মচারীরা। দুই-চারজন ক্রেতা আসলেও করছেন অনেক দামাদামি, কিনছেন কম। বেচা-বিক্রি কম হওয়ায় ঈদ উপলক্ষে আনা পণ্যের চালানের পয়সা উঠানো নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর মৌচাক-মালিবাগ এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবারের চেয়ে আবের চার ভাগের একভাগ, কোথাও কোথাও অর্ধেক ব্যবসা হচ্ছে। তাদের মতে, রমজানের প্রথম দিকে দোকান বন্ধ ছিল, সবাই ভেবেছিল শেষ দিকে লকডাউন তুলে দেবে। লকডাউন উঠে গেলেও হচ্ছে না প্রত্যাশা অনুসারে ব্যবসা। যতটুকু হচ্ছে তা দিয়ে ভাড়া কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা যাবে কি-না সে চিন্তায় আছি।
বিজ্ঞাপন
নাম না প্রকাশের শর্তে দোকান মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, করোনার ভয়ে অনেক মানুষ মার্কেটে আসছে না। আবার অনেকের ইচ্ছা আছে কিন্তু আয় কমেছে। তাদের কেনার সামর্থ্য নেই। সব কিছুর প্রভাব পড়েছে ব্যবসার ওপর। তাই এবারের ঈদে চালান উঠানো দায়।
সোমবার (১০ মে) পাঞ্জাবির জন্য জনপ্রিয় মালিবাগের আয়েশা শপিং মল, মৌচাক এবং ফরচুন মার্কেটে গিয়ে দেখো গেছে, দোকানগুলো অনেকটা ফাঁকা, ক্রেতা নেই। দুই-চারজন যারা আসছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ মাস্ক পড়ে, হাতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করে মার্কেটে ঢুকছেন। ছুটির দিন তারপরও ক্রেতার দেখা না পাওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
দেশের পাইকারি পাঞ্জাবি বিক্রির বড় মার্কেট আয়েশা শপিং। মার্কেটের আনুকা ফ্যাশন নামে একটি দোকানে গিয়ে জানা গেছে, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দোকানটিতে মাত্র ৭শ টাকা বিক্রি হয়েছে।
দোকানের ম্যানেজার মিল্টন দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর রোজার ঈদে ৭০-৮০ লাখ টাকা ব্যবসা করি। এ বছর রমজানের মাত্র ১২-১৫ লাখ টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। এবার চালান নিয়ে শঙ্কায় আছি।
তিনি বলেন, এটা পাইকারি মার্কেট। এখানে ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ পাঞ্জাবি কিনতে আসে। কিন্তু লকডাউনের কারণে এবার চিত্র ভিন্ন।
একই অবস্থা মার্কেটটির সামনের সারিতে থাকা লুঙ্গির দোকান অর্কেড কালেকশনের। দোকানদার শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের প্রথমদিকে দোকান বন্ধ ছিল। এখন চালু হয়েছে। কিন্তু দিনে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার জায়গায় ২০-৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসা কিছুটা ভালো হলে অন্তত দোকান ভাড়াটাও দিতে পারব। তবে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারব কিনা জানি না।
মৌচাক মার্কেটের (ইউরো গার্ডেন) অ্যামিটেশনের অলঙ্কার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, বেচা-কেনার অবস্থা অনেক খারাপ, নেই বললেই চলে। আগে যেখানে এক লাখ টাকা হতো এখন ১৫-২০ হাজার টাকা হচ্ছে। পাঁচ ভাগের একভাগ হচ্ছে। কোনো মতে দোকান ভাড়া উঠাবো।
তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০০ টাকা। ক্রেতার দেখা নেই।
ফরচুন মার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোক না আসলে বিক্রি করব কার কাছে। এবার চরমভাবে ধরা খেয়েছি।
ঈদের উপলক্ষে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে পাঞ্জাবি কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল সকাল এসেছি যাতে কোনো ভিড় না হয়। দোকানগুলো দেখে পাঞ্জাবী কিনতে। এখানে এসে দেখি দাম অনেক বেশি।
এমআই/এমএইচএস