পাটুরিয়া ঘাটে ফেরিতে যাত্রীর ঢল

ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রেন সবকিছু বন্ধ, তারপরও ঘরমুখী হয়েছেন সবাই। নৌযান এবং বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা ফেরিকেই নদী পারাপারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নানা রকম চেষ্টা করেও এ যাত্রা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় গলদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই ঢাকা থেকে মানুষ বিকল্প উপায়ে বাড়ি যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দেশের প্রধান দুটি ফেরিঘাটে (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও বাংলাবাজার-শিমুলিয়া) বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকেল থেকে ভিড় করতে থাকেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো ঘরমুখী মানুষ। শুক্র, শনি ও রবিবারেও তা অব্যাহত থাকে।

মানুষের এভাবে বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শনিবার থেকে দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। রাতে শুধু পণ্যবাহী যান পারাপারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো নির্দেশনা না মেনে ভোগান্তি নিয়েই মানুষ ঘাট এলাকায় ভিড় করতে থাকেন। জোর করে উঠে যান ফেরিতে। হাজার হাজার যাত্রীর চাপের মুখে শনি ও রবি দুদিনই ঘাট ছেড়ে যায় বেশকয়েকটি শিডিউল বহির্ভূত ফেরি।

পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে শনিবার ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুলিশের চেকপোস্টও সক্রিয় হয়। কাজ হয়নি তাতেও। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সবকিছু এড়িয়ে ঠিকই কৌশলে ফেরিঘাটে পৌঁছে যান। তাদের চাপে শেষ পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে ফেরিতে যাত্রী বহন করতে হয়।

সবশেষ দুদিন পর সোমবার (১০) বিকেলে ফেরি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর বাধাহীনভাবে ফেরি করে নদী পার হচ্ছেন মানুষ। নিরাপদ দূরত্ব না মেনে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে, হুড়োহুড়ি-গাদাগাদি করে বাড়ি যাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার যাত্রীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের এক ধরনের ব্যর্থতা স্পষ্ট। ‘হুট’ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেরি বন্ধ করা আবার পরে চাপের মুখে খুলে দেওয়ায় বরং সবদিক থেকে ক্ষতি হয়েছে। যাত্রীরা তো বাড়ি গেলেনই শেষমেষ, মাঝে অতিরিক্ত গাদাগাদি করে যাওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে গেল।

সরকারি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন সম্পর্কে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিধিনিষেধের আদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। ফেরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকারি সংস্থা।’

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ অনুযায়ী গত ৫ এপ্রিল থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ফেরিগুলো তখনও যাত্রী পরিবহন অব্যাহত রাখে। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি বিআইডব্লিউটিসি।

গত শুক্রবার (৭ মে) সকালে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে রো রো এনায়েতপুরী ফেরিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ যাত্রী পরিবহনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। 
শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত সাধারণ ফেরিতে যাত্রী পরিবহন না করা হলেও জরুরি ফেরিতে পরিবহন করা হয়েছে। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে সক্ষম হয়নি কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি- জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম সোমবার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকায় প্রায় দুই কোটি লোক বসবাস করেন। আমরা ফেরিতে যাত্রী পরিবহন সামাল দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। জরুরি ফেরি সেবার আওতায় যেসব ফেরি চলছে সেগুলোতেও যাত্রীরা উঠে পড়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পারাপারের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি। যারা ঢাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন, তারা থাকবেন কোথায়? তারা অসহায়, প্রান্তিক মানুষ। আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে ফেরি বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু জরুরি সেবার ফেরিতেই যাত্রীরা পার হয়ে গেছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধে রাজধানী ঢাকার সবকটি বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারপরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে যে যেভাবে পারছেন বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন।

পিএসডি/আরএইচ/জেএস