যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত জোট ‘কোয়াড’ ইস্যুতে বাংলাদেশকে নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, চীনের রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করেছেন।

মঙ্গলবার (১১ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেপালকে করোনা মোকাবিলায় জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরা নির্ধারণ করব। চীনের রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করেছেন। কোয়াড নিয়ে আমরা কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করিনি।’ 

আরও পড়ুন: চীন থেকে ৪-৫ কোটি ডোজ টিকা কেনার পরিকল্পনা সরকারের

চীনা রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্য দুঃখজনক উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘চীনারা কখনও কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। আমরা কী করব না করব এটি অন্যরা বড় করে বলতে পারে না। এটি খুব দুঃখজনক। যে কোনো দেশ তাদের মতামত দিতে পারে, আমরা তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনব। তবে আমরা কী করব না করব, জনগণের কথা বিবেচনা করে সে বিষয়টি আমরা নির্ধারণ করব এবং সিদ্ধান্ত নেব।’

রাষ্ট্রদূত লি জিমিং-এর বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো বক্তব্য নেই বলেও জানান মোমেন। 

টিকা উপহার দেওয়ার জন্য চীন বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার টিকার জরুরি অনুমোদনের জন্য সময় নিয়েছে প্রায় ৩ মাস। কেন বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি করল তার ব্যাখা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আমাদের একটা সিদ্ধান্ত ছিল আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন না পেলে চীনের টিকা নেব না। আমাদের পন্ডিতরা বলেছেন, এই অবস্থায় টিকা নেওয়া ঠিক হবে না। আমাদের দেশের জনগণের যেন ক্ষতি না হয়, আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গল চাই। সেজন্য আমরা তখন সায় দিইনি।

আরও পড়ুন: টিকা আনতে চীনের পথে বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমান

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনু‌মোদন পায় চী‌নের সি‌নোফার্মার ক‌রোনা টিকা। তবে এর আগেই বাংলাদেশ চীন থেকে টিকা নিতে রাজি হয়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি তিন থেকে চারদিন আগে চীনের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। চীন বলেছে, ৬৩ দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান তাদের টিকা নিয়েছে, তাদের কারও পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। আমাদের দেশে সিদ্ধান্ত হয় দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য; যথাসময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সোমবার (১০ মে) ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময়ে কোয়াড ইস্যুতে বলেন, বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দিলে বেইজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ হবে। 

এদিকে গত ২৭ এপ্রিল একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গি। সেই সফরে ফেঙ্গি ঢাকাকে জানিয়ে গেছেন, তার দেশ কোয়াডকে ‘চীনবিরোধী জোট’ মনে করে। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফরের ১৪ দিনের মাথায় রাষ্ট্রদূত লি জিমিং কোয়াড ইস্যুতে বলেছেন, 'আমি এটি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই চার সদস্য বিশিষ্ট ক্লাবে যোগ দিলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এর ফলে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'

এনআই/এসএম/জেএস