প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা (কোভিশিল্ড) নেওয়ার এক মাস পর ৯২ শতাংশ ও দুই মাস পর ৯৭ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। 

বুধবার (১২ মে) রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর’বির যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া শুরু হয়। টিকাদান শুরুর পর থেকে আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর’বি যৌথভাবে টিকাগ্রহীতাদের রক্তে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করছে। এই গবেষণায় দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬ হাজার ৩০০ টিকাগ্রহীতার মধ্যে টিকাগ্রহণ পরবর্তী দুই বছর সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রক্তে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে।

গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া ১২০ জনের মধ্যে একমাস পর ৯২ শতাংশের দেহে এবং দুই মাস পর ৯৭ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সব বয়সের টিকাগ্রহীতার দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। 

টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে যাদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের শরীরে চার (৪) গুণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে কোভিশিল্ড টিকা নেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। চলমান গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে। অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সম্পর্কে জানা যাবে।

৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৫ ডোজ টিকা দেওয়া শেষ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ জন। অর্থাৎ দুই ডোজ মিলিয়ে মোট ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৫ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ জনকে টিকার ঘাটতির কারণে এখনই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাদের দ্বিতীয় ডোজে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দিতে হবে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

এদিকে বুধবার টিকা নিয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৩২ জন। তাদের মধ্যে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর ২ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকার জন্য নিবন্ধন।

দেশে সংগৃহীত মোট টিকার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২ লাখ। বর্তমানে অবশিষ্ট টিকা আছে ৭ লাখ ২৮ হাজার ৯৩৫ ডোজ। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার বাকি রয়েছে ১৪ লাখের বেশি মানুষ, যারা প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন।

টিআই/আরএইচ/এসএসএইচ