ঘড়ির কাটায় সকাল সাড়ে ৯টা না বাজতেই কিছু এলাকায় ফেরি করে বাসা-বাড়ি পরিষ্কারের উপকরণ বিক্রি করেছেন আবুল কাশেম ও শ্রী মিন্টু দাস। গাছের ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি খোশ গল্পে মেতেছেন দুজন।

গল্পে ঘুরে ফিরে একটাই প্রসঙ্গ আসছে- ঈদেও পরিবারের কাছে থাকতে না পারা। পরিবারের মঙ্গলের জন্যেই তো কাজ করছেন এ শান্তনায় নিজেদের শক্ত করছেন দুজন। টাঙ্গাইল থেকে আসা এ দুজন শ্রমজীবী জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি দেন বেশ কয়েক বছর হলো।

রাজধানীর উত্তরার ৫ নং সেক্টরের কথা হয় তাদের সঙ্গে। আলাপকালে আবুল কাশেম জানান, এবারই তার প্রথম পরিবার ছাড়া ঢাকায় ঈদ করা হবে। অনেক খরচের পাশাপাশি এ সময়ে বিক্রি ভালো হয় বলে এবার সিদ্ধান্ত নেন ঈদের সময়ে রাজধানীতে থাকার। তবে ঈদের বাজারঘাট করার জন্যে টাকা পয়সা পাঠিয়েছেন তিনি।

আবুল কাশেম বলেন, দিনশেষে তো টাকাটাই মুখ্য। মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঈদের সময়ে তো অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ করা যায়। এ শহরে তো কেউ কাউকে ফিরেও দেখে না। কিন্তু কী করব। পরিবার বড় হচ্ছে, খরচ বাড়ছে। এখন যদি আয় না করি তাহলে তো আরও বেশি সমস্যা হবে।

এ কারণে সবকিছু ভুলে এবার ঢাকায় থেকেই ঈদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যোগ করেন আবুল কাশেম। মিন্টু দাস জানালেন, ব্যক্তিগত অন্য এক ঠেকায় এবার সব শখ আহ্লাদ দূরে ঠেলে কাজ করে যাচ্ছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেল প্রায় একই রকম চিত্র। সবার মনটা বাড়িতে থাকলেও অভাবের কারণে থাকতে হচ্ছে ঢাকায়। এ সময়ে একটু আয়ও ভালো হয় বলে অনেকেই মত দেন।

জহুরা মার্কেটের পাশের এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসা-বাড়ির সামনের গাছে পানি দিচ্ছিলেন মো. জাহিদুল ইসলাম। ময়মনসিংহ থেকে আসা এ যুবক এবার দ্বিতীয়বারের মতো পরিবার ছাড়া ঢাকায় ঈদ করছেন।

ঈদে বাড়ি যাবেন না? প্রশ্ন শুনেই মনটা খারাপ করে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ছুটি পাইনি। তাছাড়া এ সময়ে বাসা বাড়িতে কাজের একটু চাপ থাকে। সবমিলিয়ে যাওয়া হয় নি। মনটা বাড়িতে পড়ে আছে। খারাপ লাগছে। কিন্তু কী আর করা। গরীব মানুষ। কাজ করেই তো আমাদের খেতে হবে। আগে কাজ তারপর শখ আহ্লাদ।

ঝালকাঠি থেকে আসা শ্রমজীবী মো. হাবিব জানান, নানা সমস্যার কারণেই এবার আর বাড়িতে যাওয়া হলো না। গাড়ি ঠিক মতো চললে হয়তো নিজেকে আর ধরে রাখতে পারতেন না। ছেলে মেয়েদের ছাড়া ঈদ করা অনেক কষ্টের। কিন্তু উপায় তো নাই। গরিব মানুষ হয়েছেন, সব মেনে নিয়েই চলতে হবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, রিকশাচালক থেকে শুরু করে রাজধানীতে কাজ করা অধিকাংশের বাড়িই ঢাকার বাইরে। সবার মনটা বাড়িতে যাওয়ার জন্যে ছটফট করছে। কিন্তু জীবিকার তাগিতে চাকরি, কর্ম টিকিয়ে রাখতে থাকতে হচ্ছে কংক্রিটের শহরে। পরিবার ছাড়া কাটাতে হচ্ছে ঈদ।

একে/এইচকে