করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এতে গত ৫ এপ্রিল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে দূরপাল্লার পরিবহন ছাড়া সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে।

দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় এ সেক্টরের শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে দারিদ্র্যের কালো ছায়া। বাধ্য হয়ে সরকারের নির্দেশনা না মেনেই দূরপাল্লার যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (১৩ মে) রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় এমনই চিত্র দেখা গেছে। 

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের সামি-জনি পরিবহনের চালক মাহবুব ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়ি নিয়ে রাজশাহী যাব। এজন্য বের হয়েছি। আমার পেটে ক্ষুধা, কয়েকদিন ধরে আমার বাসায় কোনো খাবার নাই। আমার বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে আছি। আমাদের কেউ ১০ টাকাও দিচ্ছেন না। কেউই আমাদের খোঁজ রাখছেন না। এখন আমি তো ভিক্ষা করতে পারি না। এজন্যই গাড়ি বের করছি যাত্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য।

মাহবুব বলেন, সত্য কথা বললে চোখে পানি চলে আসে। আমার ছেলে-মেয়েকে চাহিদা মতো কিছুই দিতে পারছি না। ঠিক মতো খাবারও দিতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই টাকার বিষ কিনে দিলে আমরা খেয়ে মরতে পারতাম। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নাই।

তিনি বলেন, আমরা এমন জায়গায় চলে এসেছি, না খেয়ে মরার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যে সংসারের মানুষ দিন এনে দিন খায়, সে সংসারে যদি দেড় মাস কোনো আয় না থাকে তাহলে কী অবস্থা হয় বলেন। কিছু টাকা জমানো ছিল সেগুলো কয়েকদিন খেয়েছি। এখন দোকান থেকে বাকি নিয়ে খাচ্ছি। বর্তমানে দোকানদারও বাকি দিতে চান না। অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে দোকানে।

সরকার মার্কেট-শপিংমলসহ সবই খুলে দিচ্ছে জানিয়ে এই পরিবহনচালক বলেন, শুধু পরিবহন বন্ধ রাখছেন কেন? আমদের না খেয়ে মরার জন্য? গাড়ি নামাইছি ঠিক আছে, কিন্তু যাত্রী তো ভয়ে আসছেন না। তারপরও দেখি কি হয়। আজকে দেড় মাস ধরে বসে আছি।

তিনি বলেন, আমি একজন ড্রাইভার একটি গাড়ি নিয়ে রংপুরে গিয়ে আবার ঢাকায় আসলে বেতন পাই মাত্র এক হাজার টাকা। এ হিসেবে আমি মাসে ১৫টা ট্রিপে ১৫ হাজার টাকা আয় করি। এই টাকায় আমার সংসার চলে। এর মধ্যে গত দেড় মাস ধরে সরকার গাড়ি বন্ধ রেখেছে। তাহলে আমরা কিভাবে চলব, কি খাব, তা কেউ চিন্তা করছেন না। আমাদের সংগঠন বা সরকারের তরফ থেকে এখনও কোনো কিছু করেনি তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে শুনলাম প্রধানমন্ত্রী নাকি আমাদের ২ হাজার ৫০০ করে টাকা  দেবেন। এজন্য আমরা এনআইডি কার্ডসহ যা যা লাগে সব নেতাদের কাছে জমা দিয়েছি। এখন এই টাকা তুলে নেতারা খেয়ে ফেলছেন নাকি অন্য কিছু করছেন এটাও বোঝা যাচ্ছে না। মালিকরা বলছেন, গাড়ি না চললে আমরা কোথা থেকে তোমাদের টাকা দিবো। অভাবের তাড়নায় আমাদের শ্রমিক ইউনিয়নে গেলাম, তারা বলে আমরা কোথা থেকে দিব। সরকার বন্ধ রাখছে আমরা কি করব। সব সেক্টরই চলছে, শুধু সব করোনা আমাদের পরিবহনে। সরকারের এমন অযৌক্তিক বিধিনিষেধে মালিক-শ্রমিকরা মরছি।

অন্যদিকে, রাজধানীর মধ্যে চলাচল করা রইছ পরিবহনের  চালক খালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ হওয়াতে আমাদের কষ্ট হয়ে গেছে। আমি এক মাস ১৭ দিন পরে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। আজ সকালে আমিনবাজার থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত একটা ট্রিপ দিয়েছি। সব চলছে, কোনো কিছু বাদ নাই। ঘাটে ফেরি ও লঞ্চ দিয়ে সবধরনের যানবাহন পার হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশে টাকা খাচ্ছে, গাড়ি ছাড়ছে। টাকার বিনিময়ে এখন সব চলছে। সকাল থেকে আমিনবাজার থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত গাড়ি চালানোর জন্য চার হাজার টাকা দিয়েছি পুলিশকে। টাকা না দিলেই গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে নিচ্ছে। একদিন পর গতকাল রাতে ভাত খেয়েছি। এগুলো কেউ বিশ্বাস করবে না। পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে না পারায় মোবাইল বন্ধ করে রেখেছি।

এসআর/আরএইচ