অন্য বছর ঈদের অন্তত ১০ দিন আগে থেকেই ঘরমুখী মানুষের ভিড় লেগে যেত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ত এ টার্মিনাল ব্যবহার করে। যাত্রীদের ভিড় সামাল দিতে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না নৌ-শ্রমিকরা।

কিন্তু এবারের দৃশ্য ভিন্ন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ-যান চলাচল। এ অবস্থায় কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। তার ওপর ঈদের সময় কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।  

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নৌ শ্রমিকদের অনেকে শুয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ এক মাস কাজ না থাকায় চরম অর্থ কষ্টে দিন কাটছে তাদের। হাতে টাকা না থাকায় অনেকেই ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন না। 

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সুরভী ৮ লঞ্চের কর্মচারী (কেরানি) রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৫ এপ্রিল সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এক মাস ধরে আমরা খুবই কষ্টে আছি। লঞ্চ যদি চলত তাহলে কিছু বাড়তি আয় করতে পারতাম। এখন তো সেটাও হচ্ছে না। আমরা যারা লঞ্চে চাকরি করি তাদের বেতন সীমিত। যাত্রীরা কিছু ঈদ সালামি দিলে সেটা দিয়ে আমরা ভালোভাবে চলতে পারি। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। মালিকপক্ষ থেকে বেতনের সামান্য অংশ পেয়েছি। তাছাড়া ঈদ বোনাস পাইনি।

আরও পড়ুন : আন্দোলনে যাচ্ছেন লঞ্চশ্রমিকরা

রুহুল আমিন বলেন, আশা ছিল পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাব। কয়টা দিন সুখে শান্তিতে থাকব। লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণে সে আশাও পূরণ হলো না। শেষ পর্যন্ত ঈদটাও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে করা লাগছে।

একই লঞ্চের কর্মচারী মেহেদি হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কথা বলে কোনো লাভ নেই। আজ এক মাস ধরে খুব কষ্টে আছি। ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাইনি। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে পরিবারকেও কোনো টাকা দিতে পারিনি। কিছু দিন আগে আমাদের নামের তালিকা করে নিয়ে গেছে। বলেছিল সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো সে রকম কোনো অনুদান আমরা পাইনি। 

সদরঘাটে ঈগল-৩ লঞ্চে ঢুকে দেখা গেল শ্রমিকরা ক্যারাম খেলছেন। তাদের সঙ্গে ঈদ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। 

এ লঞ্চের শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার পরিস্থিতির মধ্যেও আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন এটাই অনেক বড় পাওয়া। তবে ঈদ মৌসুমে লঞ্চ চললে কিছু বাড়তি আয় রোজগার হতো। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদটা ভালোভাবে কাটাতে পারতাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈদে বাড়িতে যেতে পারিনি। টাকা পয়সাও পাঠাতে পারিনি। তাই ঈদ ভালোভাবে কাটবে না।

লঞ্চের কর্মচারী জাকির হোসেন বলেন, আমরা যদি এখন আপনাদের কাছে বলি বেতন-ভাতা পাইনি, তাহলে আমাদের চাকরি থাকবে না। তারপরেও আমরা বলব ভালো আছি। সরকার যদি লঞ্চ চলাচল চালুর ঘোষণা দেয় তাহলে আমাদের সংকট আর থাকবে না। 

আরও পড়ুন : লঞ্চ চলাচল ঠেকাতে নদীতে লোহার পাইপ দিয়ে বেড়া

ঘাট শ্রমিক মোহাম্মদ ওয়াসিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একমাস ধরে লঞ্চঘাট বন্ধ। আমাদের কাজ নেই। তাই ঘাটে এসে বসে থাকি। সামনে ঈদ কিন্তু বাড়ি যেতে পারিনি। এমনকি একটি টাকাও পাঠাতে পারিনি। ঘাট খোলা থাকলে তো আমরা পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পরতাম। কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

ঘাট শ্রমিক টিটো মাতবর বলেন, সরকার যদি ঘাট খুলে দিত তাহলে আমাদের কষ্টটা কিছুটা কমতো। কাজ না থাকার কারণে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। ঈদে ছেলে মেয়েদের কাপড়  কিনে দিতে পারিনি। কীভাবে কিনে দেব? টাকা নেই। টাকার জন্য পরিবারের লোকজনও কান্নাকাটি করছে।

টিএইচ/এসকেডি