বিধিনিষেধ কার্যকরে পুলিশের চেকপোস্ট/ ছবি : সুমন শেখ

দেশে চলছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউ মোকাবিলায় কয়েক দফা বিধিনিষেধও জারি করেছে সরকার। তবে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধে কিছুটা শিথিলতা দেখা গেছে ঈদকে সামনে রেখে আন্তঃজেলা যানচলাচল এবং শপিংমল-দোকানপাট খোলার মধ্য দিয়ে।

ঈদযাত্রার সময় ফেরিঘাটের ঘরমুখো মানুষের ভিড় করোনা মোকাবিলার বিধিনিষেধকে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রেখে দেয়। ফেরিঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ফেরি পার হতে গিয়ে পাঁচজন মানুষ মারাও পড়েছেন।

ঘরমুখো মানুষের এমন স্রোত ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক সামনের দিকে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।  

এদিকে, বিধিনিধেষ শুরুর দিকে অনেকটাই সরব ছিল আইনশৃংখলা বাহিনী। তবে শপিংমল খোলা শুরু থেকে ঈদযাত্রা পর্যন্ত বিধিনিষেধ মানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখা যায় নীরব ভূমিকায়। ‘কাগজে-কলমে’ মাঠে পুলিশ থাকলেও বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশকে তেমন তৎপর দেখা যায়নি।  চেকপোস্ট ও মুভমেন্ট পাসের বিষয়ে পুলিশের ‘নামমাত্র’ তৎপরতা দেখা যায়। আর মাঠপর্যায়ে পুলিশের সরব ভূমিকা না থাকলে বিধিনিষেধ মানুষকে মানানো সম্ভব নয় বলেও অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন।

পুলিশ সদরদফতর সূত্রে জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে সরকার যানচলাচল এবং দোকানপাট-শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কিছু শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। এত জনস্রোতের বিপরীতে আইন প্রয়োগ বা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন পুলিশের পক্ষে খুব সহজ নয়। ফলে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিচ্ছে না পুলিশ। তাই আপাতত নির্দেশনা মানতে বল প্রয়োগের চেয়ে মানুষকে বুঝিয়ে কাজ করাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।

পুলিশ বলছে, ঈদের যাত্রা এবং ফিরতি যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বল প্রয়োগ করে বিধিনিষেধ মানানো পুলিশের পক্ষে কষ্টসাধ্য। লাখো মানুষের জনস্রোতে বল প্রয়োগ করে তেমন কোনো সাফল্য পাওয়া যাবে না। তাই ঈদযাত্রা ও ফিরতি যাত্রা শেষ হলে সরকারি নতুন নির্দেশনা এলে বিধিনিষেধ মানানোর বিষয়ে পুলিশ মাঠপর্যায়ে আইন প্রয়োগে তৎপরতা বাড়াতে পারবে।

চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া মুভমেন্ট পাসের নিয়মটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। চালু হওয়ার পর থেকে মানুষের আগ্রহ ও পুলিশের তদারকির কারণে মুভমেন্ট পাসের বিষয়টি বেশ সফলভাবেই কাজ করছিল। কিন্তু দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আগ্রহ এবং পুলিশের তদারকি কমে যাওয়ায় মুভমেন্ট পাসের নিয়মটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বিধিনিষেধ কার্যকরে পুলিশের চেকপোস্ট/ ছবি : সুমন শেখ

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদফতর বলছে, মুভমেন্ট পাসের বিষয়টি এখনও কার্যকর রয়েছে। তবে এটি কখনোই বাধ্যতামূলক করা হয়নি। নির্দেশনা মানতে বলপ্রয়োগ করে কাউকে বাধ্য করছে না পুলিশ। বিপুল সংখ্যক মানুষকে এভাবে বাধ্য করা সম্ভব নয়। আইন ও সরকারি নির্দেশনা মানতে কঠোরতার পাশাপাশি মানুষের সচেতন সমর্থন প্রত্যাশা করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে যানবাহন থেকে শুরু করে শপিংমল খোলার পর সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কিছু শিথিলতা দিয়েছে সরকার। এই সুযোগে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় বের হয়ে এসেছেন। ফলে শুধুমাত্র বল প্রয়োগ করে জনস্রোতকে সরকারি নির্দেশনা মানানো পুলিশের পক্ষে খুব সহজ নয়। তাই কঠোরতার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতার দিকেও নজর দিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া মুভমেন্ট পাসের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বিপুল সংখ্যক মানুষকে এভাবে বাধ্য করা সম্ভব নয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) পর্যায়ের বিভিন্ন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলমান বিধিনিষেধের শুরু থেকেই পুলিশ বল প্রয়োগের তুলনায় মানুষজনকে সচেতন করার বিষয়ে  বেশি তৎপর ছিল। এছাড়া বিভিন্ন শপিংমলে এবং লোক সমাগম হয় এমন সড়কে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মানার অভিযানও পরিচালনা করেছে পুলিশ। পুলিশের এসব তৎপরতার সফলতাও এসেছে। কিন্তু ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের সব কাজ মাঠ পর্যায়ে ব্যাহত হয়। ফলে ঈদের ফিরতি যাত্রা বা তার আগে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে নতুন করে সরকারকে ভাবতে হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৩ মে) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, শতভাগ মাস্ক পরার বিষয়টি হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা আছে, আমাদের যে আইনটি (সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল-আইন, ২০১৮) আছে সেখানে কিছু সংশোধনী এনে পুলিশকে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে কিছু কাজ করা যায় কি না। আমরা সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার নতুন করে আরও সাত দিন বিধিনিষেধ বাড়াতে চাচ্ছে। নতুন ঘোষিত হওয়া বিধিনিষেধে পুলিশকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার আলোচনা হচ্ছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকার পুলিশকে নির্বাহী ক্ষমতা দিলে তা বিচার-বিশ্লেষণ (পুলিশ কিভাবে কতটা প্রয়োগ করতে পারবে) করা হবে। এরপরই পুলিশ তৎপরতা দেখাতে পারবে। 

এমএসি/আরএইচ