ঈদের জামাত শেষে মুসল্লিরা বেরিয়ে যাচ্ছেন যে যার মতো। রাজধানী গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের চিত্র এটি / ছবি : ঢাকা পোস্ট

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে দেশজুড়ে উদযাপন করা হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। সকাল ৭টায় জামাতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবারও ছিল না চিরাচরিত কোলাকুলি আর করমর্দনের দৃশ্য।

জামাত শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের আনন্দ ভাগাভাগির চিরাচরিত দৃশ্য এবারও ছিল অনুপস্থিত, হাত মেলানো ও কোলাকুলির মতো সংস্পর্শ নিষিদ্ধ থাকায় অতৃপ্তির কথা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আক্ষেপ করে মুসল্লিরা বলেন, অনেক দিন পর ঈদ জামাতে পরিচিত ও প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হলেও কোলাকুলি তো দূরের কথা হাত পর্যন্ত মেলাতে পারিনি। আবার কবে যে ফিরে আসবে স্বাভাবিক সেই দৃশ্য! আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করেছি যেন দ্রুত এ দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি দেন। মানুষ যেন আবার পুরানো স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসতে পারে।

রাজধানী গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের জামাত শেষে এমন আক্ষেপের কথা বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অনেক বছর পর দেশে ঈদ করতে এসেছি। ঈদের জামাতে পুরানো অনেক পরিচিত মুখ ও প্রিয়জনকে কাছে পেয়েও কোলাকুলি তো দূরের থাক হাতটুকু মেলাতে পারেনি। কোলাকুলি করতে পারছি না, এ জন্য কষ্ট হচ্ছে। জামাত শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা মুসল্লিদের মধ্যে কোনো উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি, চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা।

দুই ছেলেকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন মুশকায়েত রহমান। ঈদ জামাতে এসে স্কুলের সহপাঠীদের পেয়ে বেজায় খুশি তার সন্তান। অনেকটা এগিয়ে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কোলাকুলি করতে গেলে বাঁধা আসে বাবাদের পক্ষ থেকে।  বাবারা বলেন, এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে, কোলাকুলি করা যাবে না। ব্যস আটকে গেল সৌহার্দ্যের প্রতীক কোলাকুলি।

আক্ষেপ করে মুশফিকুর রহমান বলেন, অন্যবার ঈদের দিন ছেলেরা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে কত মজা করত! আমরাও ছোটবেলায় তাই করে বেড়িয়েছি। কিন্তু দুই বছর ধরে এগুলো হচ্ছে না। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবের বাসায় দাওয়াত খেতে যাব, তার সুযোগও নেই। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আসল যে আনন্দ সেটি অনুপস্থিত ।

ছেলে রাকিবকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছিলেন শাহজাহান । তার কণ্ঠেও একই সুর। ঈদের জামাত শেষে প্রথমে ছেলের সঙ্গে কোলাকুলি করতাম। পরে আব্বুর সঙ্গে। এরপর আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, পরিচিত জনদের সঙ্গে। এবার তা করতে পারলাম না। তাই মন খারাপ।

জামাতের নামাজ শেষ হওয়ার পর ইমাম মাইকে ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না। তাই সবাই যেন এ দিকটা খেয়াল রাখি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। মহামারিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, একজনের দ্বারা যেন অন্যজন সংক্রমিত না হয়।

করোনার প্রকোপ ঠেকাতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও  ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এসব নির্দেশনায় ঈদের জামাতে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না। ঈদগাহ বা খোলা মাঠে ঈদের জামাত হবে না। ঈদের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। সবাই নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে পারবেন। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। মসজিদে অজুর জায়গাতেও সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

এনএম/এসকেডি