ফাইল ছবি

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় এক কিশোরীর পরিবারকে সহযোগিতার নামে তাকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন এক প্রবাসী।

কোনো উপায় না পেয়ে ওই কিশোরী বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠায়। 

পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই কিশোরী প্রবাসীর ব্ল্যাকমেইল থেকে রক্ষা পায়। শুক্রবার (১৪ মে) পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী তিথি রায় (ক‌ল্পিত নাম)। পড়াশুনায় বেশ ভালো। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। টিউশনি করে নিজের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হয় তাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় সনাতন ধর্মের এক ব্যক্তির সঙ্গে। নাম মৃত্যুঞ্জয় (ক‌ল্পিত নাম)। থাকেন দেশের বাইরে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানায়। 

মৃত্যুঞ্জয় তিথির দুর্বলতা জানতে পারেন এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চান। নিজেকে দাতা হিসেবে পরিচয় দেন। ধীরে ধীরে তিথিকে সম্পর্কে জড়াতে থাকেন। তিথির পরিবারকে মাঝে মাঝে কিছু টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। প্রেমের অভিনয় করে গভীর সম্পর্কে জড়াতে চেষ্টা করেন। তিথিও তাকে বিশ্বাস করতে থাকে। এক সময় তিথীর দুর্বলতা বুঝে তার কাছ থেকে আপত্তিকর ছবি নিতে থাকেন মৃত্যুঞ্জয়।

তিথি বিয়ের জন্য চাপ দিলে মৃত্যুঞ্জয় এড়াতে থাকেন। তিথির সন্দেহ হয়। নানাভাবে চেষ্টা করে জানতে পারেন মৃত্যুঞ্জয় বিবাহিত। দেশে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। প্রতারিত হচ্ছে টের পেয়ে সরে যেতে চায় তিথি। তাকে সম্পর্ক ধরে রাখতে বাধ্য করতে চায় মৃত্যুঞ্জয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবিগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তিথির নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকেন মৃত্যুঞ্জয়। তিথি তাকে পুলিশের কথা বলে। মৃত্যুঞ্জয় তাতে পাত্তা দেন না। তিনি ভেবেছিলেন, বিদেশে থাকেন বলে বাংলাদেশের পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। 

তিনি আরও বলেন, কোথাও কোনো সাহায্য না পেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তিথি। হঠাৎ কী ভেবে তিথি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠায় তিথি। 

মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তিথির বার্তাটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অভয় দেয়। তার পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। পাশাপাশি তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে কাউন্সিলিং করতে থাকে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধার্থে বার্তাটি তিথির থানায় না পাঠিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের নিজ থানা নাঙ্গলকোটের ওসি মো. বখতিয়ার চৌধুরীর কাছে পাঠানো হয়।

পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানা বলেন, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং এর বিশেষ রেফারেন্সে তিথির কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ নেন নাঙ্গলকোট  থানার ওসি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুঞ্জয়ের অভিভাবকদের থানায় ডাকা হয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়।  

তিনি বলেন, বিদেশে থেকে ফিরিয়ে আনার ভয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবার বেশ চাপে পড়ে। চাপে পড়ে মৃত্যুঞ্জয়ও। বিদেশ থেকেই তিনি নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিদেশে তার সঙ্গে কর্মরত একাধিক বাংলাদেশির উপস্থিতিতে একটি মুচলেকায় সই করে তা বাংলাদেশে পাঠান মৃত্যুঞ্জয়। সঙ্গে তিথির সব তথ্য ডিলিট করার প্রমাণাদি পাঠান এবং ফেক আইডি বন্ধ করেন। এতে তিথির পরিবার সন্তুষ্ট হয়।

আইনি সহায়তা পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে তিথি লিখেছেন, ‘স্যার, আপনাদের ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। আপনাদের এই নিঃস্বার্থ সহযোগিতা কখনো ভুলবো না। আপনারা আমাকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দিলেন।’

এমএসি/আরএইচ