অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া, স্থানীয়-জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ এবং প্লেন ভাড়া বৈষম্যসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

রোববার (১০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্বের বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যসহ দাবিগুলো উপস্থাপন করেন সংগঠনটির চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বের সব প্রবাসী বাংলাদেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভূমিকা রেখে আসছেন। কিন্তু এই প্রবাসীরাই বরাবর নানা ধরনের অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন। আমরা মনে করি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের যেমন আমরা নতুন একটি দেশ পেয়েছি, তেমনি প্রবাসীরাও দীর্ঘদিন ধরে চলমান সব বৈষম্য থেকে মুক্তি পাবে।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা জিল্লুর রহমানের উল্লিখিত দাবিগুলো হলো- 

১. দেশের এই সময়ে অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ বা রেমিটেন্স ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আমরা মনে করি, এটা অবশ্যই সম্ভব। সরকারের সহযোগিতা পেলে বিদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দ্রুত এই ব্যাপারে রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য পজেটিভ ক্যাম্পেইন শুরু করা যেতে পারে।

২. প্রবাসীদের কোনোরকম প্রতিনিধিত্ব আজ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো পর্যায়ের পরিলক্ষিত হয়নি, আমরা এই ব্যাপারে খুবই মর্মাহত। আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়ে এই দেশের নাজুক অর্থনীতিকে সচল করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু এর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি অবহেলা ও অবমাননা। এর সমাধান চাই।

৩. আমরা আজকে দ্ব্যর্থ ভাষায় ঘোষণা করতে চাই, দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন, পার্লামেন্ট, বিদেশ মিশন, সামরিক বেসামরিক প্রতিটি সেক্টরে বৈষম্যহীনভাবে নাগরিক আনুপাতিকহারে প্রতিনিধিত্ব আমরা চাই। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যেন শতভাগ বাস্তবায়ন হয়, আমরা প্রবাসীরা এই সরকারের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা করছি।

৪. আমাদের ভোটাধিকার নিয়ে বিগত কোনো সরকারই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই, আমরা এই দেশের নাগরিক।

৫. বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে আরব আমিরাত, ইউরোপ-আমেরিকা, যুক্তরাজ্যে আগামী ৫ বছরে আরও ২০ লাখ লোক পাঠানোর জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিতে হবে। যে বিষয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের কোটাসহ দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাচ্ছে এই ব্যাপারে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

৬. যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে বসবাসরত সব বাংলাদেশিদের হাই-কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. যতদিন পর্যন্ত এনআইডি কার্ড না দেওয়া হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা বিদেশি পাসপোর্টকে বাংলাদেশে আইডি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।

৮. বাংলাদেশ হাইকমিশন, যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে ব্রিটিশ পাসপোর্টকে আইডি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ ব্রিটিশ পাসপোর্টে নো ভিসা সিল ও জন্মস্থান উল্লেখ রয়েছে।

৯. যুক্তরাজ্যের হাই-কমিশনগুলোতে পাসপোর্ট বানাতে পুরুষদের মাথায় টুপি পরতে দেওয়া হয় না। তা বাতিল করতে হবে।

১০. বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-সিলেট রুটে বিমানের ভাড়া কমাতে হবে এবং ঢাকা ও সিলেটের মধ্যে অত্যধিক ভাড়ার বৈষম্য দূর করতে হবে।

১১. ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে অন্যান্য বিদেশি বিমানের ফ্লাইট চালু করতে হবে। বিগত সালে শুরু হওয়া ওসমানী বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

১২. প্রবাসী বাংলাদেশিদের জায়গা সম্পত্তি বেদখল ও মিথ্যা মামলা দিতে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

১৩. ২০২৪ সালে জুলাই আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী-আইনজীবীদের সব মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরামের বাংলাদেশের সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

টিআই/জেডএস