রেস্টুরেন্ট ওয়েটার থেকে রাতারাতি এএসপি হওয়ার গল্প
জাকারিয়া
স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও চুলের কাট ও ড্রেস-আপে জাকারিয়া নিজেকে সবসময় স্মার্ট রাখার চেষ্টা করতেন। অল্প সময়েই নজরে পড়েন রেস্টুরেন্ট ম্যানেজারের। ওয়েটারের কাজ থেকে সরিয়ে তাকে দেওয়া হয় অনলাইনে খাবার অর্ডারের চাকরি। এ কাজে তাকে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি স্যামসাং ট্যাব। এটি দিয়েই নিজের অবস্থান পাল্টানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন উচ্চাভিলাষী জাকারিয়া।
অনলাইনে জাকারিয়ার যোগাযোগ হয় চট্টগ্রামের আবির নামে এক প্রতারকের সঙ্গে। তার পরামর্শে নিজেকে পাল্টাতে থাকেন জাকারিয়া। একসময় বনশ্রীর ব্লু অলিভ রেস্টুরেন্টের ওয়েটারের পরিচয় পাল্টে জাকারিয়া রাতারাতি বনে যান সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে জাহির করেন এএসপি হিসেবে।
বিজ্ঞাপন
সেখানে তিনি নিজের পরিচয় দেন সিআইডির সাইবার ফরেনসিক এক্সপার্ট। পড়াশোনার তথ্যে লেখেন, আমেরিকার ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটিতে তিনি ক্রিমিনাল জাস্টিসে পড়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
এক মাস আগে থেকে জাকারিয়ার চলাফেরা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অ্যাক্টিভিটি অনুসরণ করে আসছিল সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। বুধবার (১৯ মে) রাতে রাজধানীর বনশ্রীর ব্লু অলিভ রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশের একটি দল। সিআইডি বলছে, প্রতারণার কৌশল হিসেবেই নিজেকে এএসপি পরিচয় দিয়ে আসছিলেন জাকারিয়া।
বিজ্ঞাপন
সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ফেসবুক পেজ নিয়মিত অনুসরণ করতেন জাকারিয়া। পুলিশের অনেক সিনিয়র অফিসারের ফোন নম্বরও তার কাছে আছে। পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ফেসবুকে সরাসরি যোগাযোগ কিংবা বন্ধুত্ব না করলেও কায়দা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফেসবুকে যুক্ত হন জাকারিয়া।
তিনি বলেন, জাকারিয়া ফেসবুকে নিয়মিত নিত্য-নতুন পোস্ট দিতেন, ঈদসহ বিভিন্ন দিবসে শুভেচ্ছা জানাতেন। পুলিশ অফিসার পরিচয় দেয়ায় দ্রুতই তার ফেসবুক বন্ধুর সংখ্যা হয়ে যায় পাঁচ হাজার। অনেক উচ্চশিক্ষিত সুন্দরী মেয়ে তার বন্ধু হন। অনেকের সঙ্গে প্রেম ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গড়ে তোলেন তিনি। গত সপ্তাহের শুক্রবার অর্থাৎ ঈদের দিন অনার্স পড়ুয়া এক মেয়েবন্ধুর সঙ্গে হাতিরঝিলে ডেটিং করেন জাকারিয়া। ভুয়া পরিচয়ে এত কিছু করলেও জাকারিয়া বুঝতেই পারেননি সিআইডির সাইবার পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, এমন অনেক প্রতারককে আমরা গ্রেফতার করেছি যারা পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে আর্থিক প্রতারণা করেছেন, প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায় করেছেন। অনেক নারী এদের সঙ্গে প্রেম করে বা বিয়ে করে প্রতারিত হয়েছেন। এ ধরনের সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের গ্রেফতারে কাজ করছে সাইবার পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় জাকারিয়াকে বুধবার (১৯ মে) গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর এক দিনের রিমান্ডে জাকারিয়া নিজের প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। শনিবার (২২ মে) তাকে ফের আদালতে তোলা হবে। তার কাছ থেকে আরও তথ্য জানার আছে।
মাসুদ জানান, দণ্ডবিধি ১৭০ ধারা মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা সেজে প্রতারণার জন্য জাকারিয়ার দুবছরের জেল হতে পারে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী তার ৫ বছরের জেল এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
জাকারিয়াকে প্রলুব্ধ করা চট্টগ্রামের আবির নামে সেই যুবককেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ। তিনি বলেন, যে যেমন তার তেমনই থাকা উচিত। নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করাই ভালো। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রোফাইল ভারী করে লাভ নেই। ছবি এডিট করে মেয়েদের পটানো বা প্রতারণা করতে গেলে এভাবেই একদিন ধরা পড়তে হবে।
জেইউ/আরএইচ/জেএস