অনলাইনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা

গত দেড় বছরে কোভিড পরিস্থিতি নারী-পুরুষের বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি বিগত সময়ের অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নারীর অবস্থার উন্নয়নের জন্য এবং উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে বাজেটে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

রোববার (২৩ মে) অনলাইনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত 'নারীর উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং আসন্ন জাতীয় বাজেট' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মহামারিতে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি। সানেমের ২০২০-২০২১ সালে করা বিভিন্ন জরিপের ফলাফল অনুসারে- শ্রমবাজার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতায় নারীর অবস্থান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শ্রমবাজারে নারীরা বেশি কাজ হারিয়েছেন। নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৩৬ শতাংশ, পুরুষের ছিল ৮০ শতাংশ। ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত জরিপে একই চিত্র দেখা গেছে। আয়-ব্যয়ে নারীপ্রধান পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। 

তিনি বলেন, শিক্ষায় ঝরে পড়ার বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না। অনলাইন ক্লাস ইতিবাচক হয়েছে তা বলা যাবে না। স্বাস্থ্যে অতিরিক্ত খরচ নারীদের বেলায় বেশি হয়েছে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে নেতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যায়। নারীর প্রতি সহিংসতা ঘরে-বাইরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোভিড থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হচ্ছে- জেন্ডার বাজেট নিয়মিতভাবে তৈরি করতে হবে; ঝরে পড়া রোধে মিড-ডে মিল, উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে, সেফটি নেট প্রোগ্রামের আওতায় নতুনভাবে দরিদ্রদের সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে; দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ প্রাপ্তির হার বৃদ্ধি করতে হবে; গ্রামীণ নারীদের স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া, মূলধারার শ্রমবাজারে নিয়ে আসা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদানে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া অভিবাসী নারীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক কাজে অন্তর্ভূক্তিকরণ, তথ্য সহায়তা দেয়া জেন্ডার ভিত্তিক ডিভাইস প্রদানে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, জেন্ডার ভিত্তিক তথ্য উপাত্তে জোর দিতে হবে। অস্বীকৃতিমূলক কাজকে বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে বাজেট কতটা টেকসইভাবে কার্যকর হচ্ছে। বরাদ্দ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, এর সাথে তা নারীর জন্য কতটা কার্যকর হচ্ছে সেটিও মূল্যায়নে পরিবীক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সহসভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী, সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী; বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ডিবিসি চ্যানেলের বার্তা বিভাগের প্রধান প্রণব সাহা।

এমএইচএন/এইচকে