সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে ইমার্জেন্সিতে দেখা হলো মেয়ের

জামিনে কারামুক্ত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রোজিনার ৯ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে আলভিনা ইসলাম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মায়ের সঙ্গে দেখা করেছে। 

এর আগে রোজিনাকে দেখার জন্য অধির অপেক্ষায় ছিল একমাত্র মেয়ে আলভিনা। মেয়ের ৬টি দীর্ঘ রাত ও দিন দীর্ঘ অপেক্ষার পর রোববার (২৩ মে) বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে কারাগার থেকে মুক্তি পান প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ ও ‘রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার’ অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় জামিন পান রোজিনা ইসলাম।

আজ (রোববার) সন্ধ্যায় তাকে সাত শারীরিক সমস্যার কারণে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। রোজিনা ইসলামের গাড়িটি যখন স্কয়ার হাসপাতালে কাছাকাছি আসে তখন আলভিনার চোখে-মুখে মাকে দেখার উচ্ছ্বাস ফুটে ওঠে। তবে ইমার্জেন্সি গেটে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের ভিড়ে মায়ের কাছে যেতে পারেনি সে। এত কাছে দেখেও মাকে ছুঁতে না পেরে তার ভেতর উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। পরে রোজিনা ইসলামকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হলে বাবা মনিরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে আলভিনাও প্রবেশ করে। সেখানে দেখা হয় মা-মেয়ের। মায়ের পাশে বসে তার কপালে ছোট্ট হাত দুটি দিয়ে পরম মমতার পরশ বুলিয়ে দেয় আলভিনা।   

এর আগে রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার টিকা নেওয়ার পর রোজিনা কোনো বিশ্রাম নিতে পারেননি। তার সাতটি শারীরিক সমস্যা রয়েছে। যার মধ্যে থায়রেড, হাইপারটেনশান, ব্লাডসুগার, ডায়াবেটিস, অ্যাসিডিটি ও গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা অন্যতম। এসব রোগের কারণে তাকে আমরা চেকআপ করাতে স্কয়ার হাসপাতালে এনেছি।

তিনি বলেন, রোজিনার প্রাথমিক চেকআপ করবেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে আইসোলেশনে রেখে কোভিড টেস্ট করানো হবে। কোভিড টেস্টে নেগেটিভ এলে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে এসব রোগের চিকিৎসা শুরু হবে। 

১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। ওই রাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন সকালে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। একই সময় জামিন আবেদন করা হলেও আদালত সে বিষয়ে শুনানি করেননি। পরে বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গ্রেফতার হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার আদালত থেকে বের হওয়ার সময় রোজিনা ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।

রোজিনা ইসলামকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে ১৭ মে রাতেই বিক্ষোভ শুরু করেন সাংবাদিকরা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। রোজিনা ইসলামের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মত দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।  

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বিষয়ে বলেছিলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি সরিয়েছিলেন, যেগুলো প্রকাশ হলে দেশের ক্ষতি হতে পারত।  

রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতারের পরদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকরা তা বর্জন করেন।   

রোজিনা ইসলামকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অর্থাৎ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টটি প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো আইন। 

এদিকে ১৭ মে রোজিনা ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যায়- এক নারী তার গলা চেপে ধরেছেন।  

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা, তাকে গ্রেফতার ও তার জামিন হবে কি হবে না- এ বিষয়টি গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে সাংবাদিক সমাজসহ সব মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

এমএসি/এইচকে