হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক হচ্ছে জনগণের সম্পত্তি, যা ধ্বংস করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবর রহমান হাওলাদার।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলামোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে আয়োজিত হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত প্রকৃতি বিধ্বংসী ও জনবিরোধী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবিতে নাগরিক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

ড. মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেছেন, হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে জনবিরোধী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণ আগামী সাত দিনের মধ্যে বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। কারণ জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

রিভার বাংলা প্রতিনিধি ড. কাজল রশীদ বলেন, ফ্লাইওভারের মতো এক্সপ্রেসওয়ে আজ পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করেছে। একটি শহরের পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান ধ্বংস হলে, সেই শহরের প্রাণ-প্রকৃতিও ধ্বংস হয়ে যায়।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পরিবেশ রক্ষার্থে সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল, সরকার যা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল রক্ষায় সরকারকে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার মতো বায়ুদূষণের শহরে উদ্যান-পার্কের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে মেগা প্রকল্পের নামে ঢাকা শহরের উদ্যান ধ্বংস করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রতিনিধি মিঠুন বলেন, বর্তমানে উড়ালসড়কটি ব্যবহার করে যতগুলো যানবাহন চলেছে তার ৯৮ শতাংশই প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস ক্যাটাগরি, অথচ যে কোনো প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। সমগ্র বাংলাদেশের পার্ক, খেলার মাঠ এবং পরিবেশের বির্পযয় রোধের জন্য একটি স্বতন্ত্র পরিবেশ কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজের (বারসিক) প্রতিনিধি সৈয়দ আলী বিশ্বাস বলেন, সরকারের উচিত যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে তার আশপাশের সামগ্রিক সবকিছুর কথা বিবেচনায় নিয়ে আসা।

মিশন গ্রীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি আহসান রনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব প্রকল্প হয়ে থাকে সেখানে সাধারণত জনসাধারণের উন্নয়নের কথা ভাবা হয় না। এ ছাড়া সমগ্র দেশে চলমান সব প্রকল্পকে পুনরায় পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষার আওতায় আনা। যে কোনো প্রকল্পের কথা বলে বন বিভাগের অনুমতিক্রমে গাছ কাটার যে প্রথা রয়েছে তা বাতিল করতে হবে।

কলাবাগান ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিনিধি মাসুদ করিম বলেন, যারা ক্ষমতার বাইরে থাকে তাদের চিন্তাভাবনায় জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে সেই ব্যক্তি ভিন্নরকম হয়ে যায়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, গ্লোবাল ল থিংকারস সোসাইটির প্রতিনিধি রাহমান স্মিতা, এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইআরডিএ) প্রতিনিধি মনির হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

এএসএস/এএমকে