বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা (বিপিইউএস)। মঙ্গলবার (১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কমিটিতে প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষদের অন্তর্ভুক্তি নেই। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত এসব পদে প্রতিবন্ধী নারীদের উপস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
বিজ্ঞাপন
বদিউল আলম বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধী নারীকে সংসদ সদস্য পদে মনোনীত করা হয়নি। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও এর কর্ম পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য ২ শতাংশ সংরক্ষিত আসন থাকার বিধান থাকলেও তা পূরণে কোনো উদ্যোগ নেই। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ব্যতীত অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোনো আইনি বাধা নেই, বরং প্রচলিত বিধিবিধান মোতাবেক গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ সাপেক্ষে ভোটার তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে বাক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ চরম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হতে বাদ পড়ে যাচ্ছে। উপরন্তু আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি যাদের সেরিব্রাল পালসি, নিউরো ডেভোপ্লেমেন্টাল ডিজঅর্ডার অথবা শারীরিক ক্ষতিগ্রস্থতার কারণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে সমস্যা হয়, তারা এনআইডি করতে গেলে বিভিন্ন বৈষম্য ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে ধারণা না থাকা বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী প্রচার প্রচারণার অভাব।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘটনা বিরল। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। সুতরাং এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে অথবা তাদের সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের কাছে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে— প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩, সিআরপিডির এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) -এর আলোকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে; রাজনৈতিক দলের জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও শহর কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কমপক্ষে ৩ শতাংশ পদ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও মহান জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে; ভোটার তালিকায় বৈষম্যহীনভাবে ১৮ বছর ঊর্ধ্ব সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ এবং ভোট প্রদানে প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ও অনলাইন ভোট এবং ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দানের জন্য ব্যবস্থা সংযুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইকুয়াল রাইটস ইন একশন ফান্ডের প্রকল্প সমন্বয়কারী মনোয়রুল ইসলাম।
এমএইচএন/এসএসএইচ