বাজেট ঘোষণায় মহামারি পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি বলে মনে করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

শনিবার (৫ মে) বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ অর্থবছরের ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক প্রতিক্রিয়ায়া সংগঠনটি এ মন্তব্য করে।

সংবাদ সম্মেলনে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, এ বছরের বাজেট ঘোষণায় মহামারি পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে নিরূপণ করা (আন্ডার এস্টিমেট) হয়নি। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিপদ হচ্ছে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এক ধরনের শৈথিল্য কাজ করে। নীতিনির্ধারকরা যদি এরকম একটি সংকটের সময়ে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিরূপণ না করেন, তাহলে কিন্তু যথার্থ নীতি প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নের তাগিদ তারা বোধ করবেন না। বাজেটের অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কথা বলা হলেও সামাজিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রতিফলিত হয়নি। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, দারিদ্র্য, বৈষম্য ইত্যাদি সামাজিক বিষয়ের পুনরুদ্ধারের কথা বাজেটে আরও সুস্পষ্ট ও গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল। 

তিনি বলেন, টাকার অংকে বাজেট বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে আমাদের বাজেট খুব সামান্যই বেড়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষাখাতে বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ বাজেট বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে, সেক্ষেত্রে জিডিপির অনুপাতে ঘোষিত বাজেটের আকার যথেষ্ট নয়। আবার যে বাজেট ঘোষণা হয়েছে সেটিও বাস্তবায়ন হয় না, বছরের শেষে সংশোধিত বাজেটের আকার এক দফা কমে, পরে আবার প্রকৃত বাজেট নথিতে দেখা যায় এই বাজেট আরেক দফা কমে যায়। আবার এটিও মনে রাখতে হবে বিভিন্ন খাতে সরকারি খরচ মানেই বাস্তবায়ন নয়, অনেক সময় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে খরচ করা আর বাস্তবায়ন করার মধ্যে বড় ফারাক থাকে। 

সংগঠনটি বলছে, শিক্ষাখাত করোনা মহামারির কারণে যে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার উল্লেখ বাজেটে সঠিকভাবে করা হয়নি। বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’র মতো নতুন বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, বিভিন্ন গবেষণায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বাল্য বিবাহের হার বাড়ছে ইত্যাদি বিষয় মোকাবিলায় শিক্ষাখাতে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বাজেট ঘোষণায় নেই। 

অন্যদিকে গরিবদের যে তালিকা সেটি ত্রুটিপূর্ণ, অনেক গরিব মানুষ সেই তালিকায় নেই, আবার অনেক স্বচ্ছল মানুষ সেখানে সামাজিক ভাতা পান। আর মহামারির কারণে নতুন করে যারা গরিব হয়েছেন, তাদের কোনো তালিকা সরকারের কাছে নেই। মহামারির সময়ে সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর এই তালিকা প্রস্তুত করার কথা ছিল, তারা সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এই গরিব জনগোষ্ঠী এই সংকটকালীন সময়ে কীভাবে সহায়তা পাবেন, সে বিষয়ে বাজেটে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে সানেম। 

আরএম/জেডএস