কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’র সদস্যরা অস্ত্রসহ গ্রেফতার

রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং কোম্পানির (ডি কোম্পানি) ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব-১)। র‍্যাব জানায়, এই কিশোর অপরাধীরা এলাকায় আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তার, ছিনতাই, মাদকের কারবার, মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করত। এই গ্রুপে রয়েছে ৫০ জনেরও বেশি সদস্য। 

র‍্যাব জানায়, এই ডেয়ারিং কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন গ্রেফতার হওয়া রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫)। রোববার (৬ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

গতকাল ৫ জুন রাতভর অভিযান চালিয়ে ডি কোম্পানির ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। লিডার লন্ডন বাপ্পি ছাড়া গ্রেফতার হওয়া অন্য সদস্যরা হলেন- মাে. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), মো. রাজিব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব (৩০), মো. সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), মো. রবিউল হাসান (২০), মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), মো. ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২), ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন (১৯)। 

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গত ১ জুন গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেখানে বসে থাকা তুহিন ও তুষার নামে দুই যুবককে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ডেয়ারিং কোম্পানি ওরফে ডি কোম্পানির দুই সদস্য। পরে এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৩ জুন রাতে একই এলাকার একটি টেইলরের দোকানসহ বিভিন্ন বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় তারা। এসময় টেইলার্সের দোকানি রুপালি, তার স্বামী আরজু মিয়া ও সুজন মিয়া নামের একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ দুই ঘটনার পর র‍্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই গ্রুপটি উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই, চুরি, মারামারি, মাদকের কারবার, সাধারণ মানুষকে মারধর ও হুমকি-ধমকিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, ডেয়ারিং গ্রুপে অন্তত ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের পৃষ্ঠপোষক লন্ডন বাপ্পি জন প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে সদস্যদের দিতেন। নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাপ্পির মাসিক আয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা বলে জানতে পেরেছি। 

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ডি কোম্পানি ওরফে ডেয়ারিং কোম্পানি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা এলাকায় মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‍্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার বিষয় স্বীকার করেছে। এছাড়াও তারা টঙ্গীতে সংঘটিত দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে। 

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিরা গ্রুপের অনেক সদস্যের নাম-পরিচয় বলেছে। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যদের ওপর র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। 

র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। কিশোর-তরুণরা ক্ষমতা দেখাতে গ্যাং তৈরি করে মারামারি করছে। এমন কিছু ঘটনা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় দাপট দেখাতে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে পার্টি করে। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে চক্কর দেয়। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে খুনোখুনিও করে বসে।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাব কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সারাদেশে এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট র‍্যাব কোম্পানি এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাবে। 

আল মঈন আরও বলেন, দেশে কিশোর গ্যাং বলে কিছু থাকবে না। যারা কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দেবেন, যারা এর সদস্য হবে, সবাইকে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

কে এই বাপ্পি?

মো. রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫) টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক। বাপ্পির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। টঙ্গীতে তিনি তার নানা বাড়িতে (লন্ডন হাউজ) বসবাস করেন। তিনি দুই বছর লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাপ্পি। এরপর এলাকায় আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তারের জন্য টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে ডেয়ারিং কোম্পানি নামে একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্যাং পরিচালনা করতে বাপ্পি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খোলেন। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তিনি মূলত এই গ্রুপটি পরিচালনা করে আসছিলেন।

এআর/এইচকে/জেএস