আম কাঁঠাল লিচুর স্বাদ আস্বাদন আর স্বজনদের স্মৃতিতে আটক তহুরের মন
তীব্র গরম ছাড়া ঈদুল আজহার ছুটি ছিল বেশ আনন্দের। ইট পাথরের শহর ছেড়ে গ্রামের লিচুর আস্বাদন যেন অমৃতের মতো। স্বজনদের মিলন মেলার স্মৃতি তো আছেই। সব মিলে নওগাঁ থেকে ঢাকা ফেরত তহুর হোসেনের মন পড়ে আছে গ্রামেই।
হানিফ পরিবহনে আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে ঢাকায় ফেরা যাত্রী তহুর হোসেনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় গাবতলি বাস টার্মিনালে।
বিজ্ঞাপন
তহুর হোসেন বলেন, বেসরকারি চাকরি করি। গ্রামে যাওয়ার উপযুক্ত সময় ঈদ। এবারের ঈদটা অন্যরকম। কারণ এবার ছুটির সময়টা ছিল মৌসুমি ফলে ভরপুর। গ্রামে গিয়ে পেট-মন ভরে আম, লিচু, কাঁঠাল খেয়েছি। মায়ের হাতের রান্না, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভাবি-বোনের হাতপাখার বাতাস তো আর মেলে না এই ইট পাথরের ঢাকা শহরে।
ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হচ্ছে। গণমাধ্যম অফিসসহ খুলেছে বেসরকারি অফিস দপ্তরগুলো। তবে সরকারি অফিস-আদালত এখনো খুলেনি। এসব কারণে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ এখনো অনেকটাই কম।
বিজ্ঞাপন
যাত্রী, পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদে ফিরতি যাত্রায় সড়কে এখনো যানজট নেই। তবে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি চালু হলে চাপ বাড়বে সড়কে। রয়েছে যানজটের শঙ্কাও।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলি রজব আলী মার্কেট, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, পর্বতা স্টপেজ, মাজাররোড ও টেকনিক্যাল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে বাসযোগে ফিরছেন কর্মমুখী মানুষ। এখন পর্যন্ত সড়কে যানজট না থাকায় রাজধানীতে ফেরা যাত্রী-চালকরা প্রকাশ করেছেন স্বস্তি।
ঢাকার মহাখালীতে একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন শিশির আহমেদ। ঈদের ঠিক দুই দিন আগে ফিরেছিলেন গ্রামের বাড়িতে। ফিরতি পথে যানজটে না পড়লেও সড়কে ছিল ধীরগতি। আজ ছুটি শেষে রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে ঢাকায় ফিরেছেন নির্ধারিত সময়েই, সড়ক ছিল ফাঁকা।
তবে নির্বিঘ্ন ফিরতি যাত্রাও মন ভরাতে পারেনি শিশির। কারণ তার মন যে পড়ে আছে গ্রামেই। দীর্ঘদিন পর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, হুইহুল্লোর, গরমে হাঁসফাঁস দশা কাটাতে পুকুরে সাঁতার কাটা, বিয়ের দাওয়াত, স্বজনদের বাড়ি বাড়ি ঘুরাঘুরি সবই তার মনে আটকে আছে।
শিশির বলেন, অফিসে লোকজন কম, আমরা ছুটি থেকে কয়েকজন ফিরেছি বলে অন্য সহকর্মীরা ছুটিতে যাচ্ছে। ঈদ ছাড়া বাড়ি যাওয়া হয় না বললেই চলে। মনটা ভারাক্রান্ত লাগছে। মন না চাইলেও কর্মে ফিরতে হলো। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের নির্মল পরিবেশ আবার কবে পাবো সেটা ভাবনাতীত।
পাবনা থেকে ছেড়ে আসা পাবনা এক্সপ্রেস বাসের নারী যাত্রী নাইমা বলেন, ভোর ৫টায় রওয়ানা দিয়ে পৌনে ৫ ঘণ্টায় পৌঁছে গেছি ঢাকা। সড়ক একদম ফাঁকা। আবারও কর্মব্যস্ততায় ডুবে যাবো। কিন্তু ঈদের ছুটির এ কয় দিনের সুখ স্মৃতি আটকে আছে মনে।
বাসটির চালক আলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছুটির আমেজ এখনো শেষ হয়নি। সড়কে যানজট নেই। গার্মেন্টস অফিস এখনো খুলেনি। গার্মেন্টস চালু হলে সড়কে তৈরি হবে চাপ।
স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের যাত্রী সাইদুল ইসলাম বলেন, যাওয়ার সময় ভোগান্তিতে পড়েছিলাম। বাচ্চারা অনেক কষ্ট করেছে। কিন্তু গ্রামে ফিরে সব ভুলে গিয়েছিল ওরা। আম বাগানে ওদের ছুটাছুটি, লিচু, কাঁঠাল খাওয়া। খালা কাজিনদের সঙ্গে ওদের খেলাধুলা ভীষণ খুশি করেছে। ফিরতেই চাইছিল না ঢাকাতে। কিন্তু অফিস তো আর সেটা বুঝে না। তাই ফিরতেই হলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলিতে যানজট, গাড়ীর অযথা জটলা এড়াতে ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমিনবাজার ব্রিজ, পর্বতা সিগনাল, মাজার রোড ও টেকনিক্যালের সিগনাল ও মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সরব উপস্থিতি।
জেইউ/এসআইআর