উচ্ছেদের পরও আগের জায়গায় দোকান বসেছে

প্রায় ছয় মাস আগে নকশাবহির্ভূত স্থাপনা অপসারণের অংশ হিসেবে গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ ও জাকের সুপার মার্কেটের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তখন ৯ শতাধিক অবৈধ বা নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সেই উচ্ছেদ অভিযান পর্যন্তই থেমে আছে ডিএসসিসির কার্যক্রম।

অভিযান পরিচালনার প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এসব মার্কেটের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি ডিএসসিসিকে। আর এই সুযোগে উচ্ছেদ করা দোকনগুলোতে অস্থায়ীভাবে দোকান পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। আগের মতোই যার যার সীমানা অনুযায়ী বসে মালামাল ডিসপ্লে করে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

গত ৮ ডিসেম্বর মার্কেটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর এ, বি ও সি ব্লক (সিটি প্লাজা, নগর প্লাজা ও জাকের প্লাজা), সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের নয় শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে অভিযান পরিচালনা শুরু করে সংস্থাটি। মার্কেটের গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত, সিঁড়ি, গলি, টয়লেট, লিফটের জায়গায় নকশাবহির্ভূত এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ আইন অনুযায়ী পার্কিং বা নকশাবহির্ভূত স্থানে অন্যকিছু নির্মাণের বিধান নেই। এছাড়া এসব অবৈধ দোকানের কারণে মার্কেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবৈধ দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল চাঁদাবাজ বাহিনী। এসব অনিয়ম বন্ধ করতেই অবৈধ দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডিএসসিসি। উচ্ছেদ করার পর তা পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।

উচ্ছেদের ছয় মাসেও এসব জায়গা ব্যবহারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন

অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হলেও ছয় মাসেও এসব জায়গা ব্যবহারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। এই সুযোগে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করার পরও অস্থায়ীভাবে এসব জায়গায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা অব্যাহত রেখেছে দোকানীরা। এছাড়া উচ্ছেদ হওয়া অনেক দোকানে ফের সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। 

জাকের সুপার মার্কেটের নিচ তলা ও ২য় তলায় উচ্ছেদ অভিযানের পরও ফের দখল করে অস্থায়ীভাবে জুতার দোকান পরিচালনা করছেন এক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমাদের মূল ব্যবসা ছিল এই দোকান। এখানে আমরা খুচরা পাইকারি মালামাল বিক্রি করতাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন এগুলো ভেঙে দিয়েছে। প্রথম দিকে অন্য জায়গায় দোকান নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও পরে যখন দেখলাম সিটি করপোরেশন আর কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না, তখন নতুন করে ভাড়া নেওয়া দোকানের পাশাপাশি এই মার্কেটের নিচ তলা ও ২য় তলায় যেখানে আমার দোকান ছিল, সেখানে অস্থায়ীভাবে মালামাল সাজিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছি।

তিনি আরও বলেন, অনেক বছর এখানে দোকান করি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাস্টমার আসে পাইকারি মাল কিনতে। এটা একটা পরিচিত জায়গা, তাই ফের দোকান দিয়েছি। তবে এটা অস্থায়ী, সিটি করপোরেশন চলে যেতে বললে আমরা চলে যাব।

অভিযান পরিচালনা করার পর থেকে এখনও ভাঙা অংশ, ইট, সুরকি সেভাবেই রয়েছে

নিচতলা সহ প্রতিটি ফ্লোরেও একইভাবে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি মার্কেটের উচ্ছেদ করা স্থানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অভিযান পরিচালনা করার পর ভাঙা অংশ, ইট, সুরকি সেভাবেই আছে। সেগুলো অপসারণ করে পুরোপুরি পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমও পরিচালনা করেনি ডিএসসিসি। এছাড়া এসব মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থাপনার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেও এর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

জাকের সুপার মার্কেটের নিচ তলায় কাপড়ের দোকানী সাইদুর রহমান বলেন, হুট করে স্থান পরিবর্তন করা যায় না। অন্য একটি মার্কেটে দোকান নিয়েছি। কিন্তু সেটা পরিচিত করাতেও তো সময় লাগবে। তাই এখানে যেটা আমার দোকান ছিল সেখানে অস্থায়ীভাবে মালামাল সাজিয়ে আমরা ব্যবসা করছি। করপোরেশন তো এই খালি জায়গা ব্যবহার করছে না। তাই উচ্ছেদ করা হলেও আমার এখানে বসেছি। এই বিষয় সবাই জানে, সিটি করপোরেশনও জানে। কিন্তু আমাদের কিছু বলছে না, ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। আবার অভিযান পরিচালনা করলে তাৎক্ষনিকভাবে আমার চলে যাব। আমাদের সেই প্রস্তুতিও আছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (মার্কেট নির্মাণ সেল) তৌহিদ সিরাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মার্কেটগুলোর বেজমেন্টে আমরা পার্কিং নির্মাণ করব। সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। পার্কিং ছাড়া অন্যকিছু আমরা করতে দেবো না। উচ্ছেদের পরও যারা দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছে, আমরা সেগুলোতে দরকার হলে আবার অভিযান পরিচালনা করব। প্রকৌশলী বিভাগ থেকে এ বিষয়ে রিপোর্ট সিটি করপোরেশনে পাঠিয়ে দেবো। মার্কেটগুলোতে পার্কিং নির্মাণ বিষয়ে আমাদের ইস্টিমেট প্রক্রিয়াধীন আছে। এরপরই আমরা সার্বিক কার্যক্রম শুরু করব।

এসব বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে উচ্ছেদ হওয়া মার্কেটের দোকানগুলোর বিষয়ে ডিএসসিসির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, যেসব মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে উচ্ছেদ করেছি, সেখানে আমরা দ্রুত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করব। ইতিমধ্যে প্রকৌশলী বিভাগ প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। এখনও যেগুলো মার্কেটের অবৈধ রুম আছে, সেগুলোও আমরা ভেঙে দেব। নিচে পার্কিং উপযোগী করতে আমাদের ইস্টিমেটও ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।

এএসএস/এমএইচএস