মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের পশ্চিম ভাকুম গ্রামের তরুণ সাগর সিকদার, পড়াশোনা করেছেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। প্রথাগত চাকরির পেছনে না ঘুরে মনোনিবেশ করেছেন কৃষিতে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ বিঘা জমিতে পেঁপে, ধুন্দল, চিচিংগা আবাদ করে ভালোই আয় করছেন তিনি। অন্য কৃষকদের থেকে তার উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভের পরিমাণও বেশি। কারণ, তিনি জমিতে রাসায়নিক সার পরিমাণ-মতো ব্যবহার করেন। বেশি প্রয়োগ করেন জৈব সার।

একসময় উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকে কম্পোস্ট সার কিনে জমিতে ব্যবহার করতেন সাগর। কিন্তু এতে তার খরচ বেড়ে গিয়েছিল, তা ছাড়া প্রয়োজনমতো পেতেন না। তাই উৎপাদন খরচ কমানোর পরিকল্পনা করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। অবশেষে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহযোগিতায় বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় স্থাপন করেন ভার্মি-কম্পোস্ট প্ল্যান্ট। এখন পর্যন্ত এই প্ল্যান্ট থেকে দুই দফায় প্রায় ৫০০ কেজি সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করেছেন তিনি। আরও প্রায় ৫০০ কেজি সার তার প্ল্যান্টে তৈরি হচ্ছে। যা চলতি মাসেই জমিতে ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে। গ্রামের অনেক কৃষক তার কাছ থেকে ভার্মি-কম্পোস্ট সার কিনে জমিতে প্রয়োগ করছেন। প্রতি কেজি সার ১৪ টাকায় বিক্রি করছেন সাগর। সে হিসাবে প্রতি মণ ভার্মি-কম্পোস্ট ৫৬০ টাকায় বিক্রি করছেন সাগর।

পশ্চিম ভাকুম গ্রামের কৃষক মো. হানিফ বলেন, জমিতে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার দিলে মাটির অনেক ক্ষতি হয়। তাছাড়া আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। কিন্তু জৈব সার বিশেষ করে, ভার্মি কম্পোস্ট সার আমাদের হাতের নাগালে না থাকায় বাধ্য হয়েই জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেছি। এবার সাগর আমাদের গ্রামেই ভার্মি-কম্পোস্টের প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। তাই তার কাছ থেকে প্রথম দফায় অল্প পরিমাণে সার কিনে জমিতে দিয়েছি। আরও ১০০ কেজি সারের অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছি। প্ল্যান্টে সার প্রস্তুত হয়ে গেলে নিয়ে যাব।

সাগর সিকদার বলেন, আমি সবসময় জমিতে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতাম। কিন্তু সময় মতো চাহিদা অনুযায়ী পেতাম না। আবার বাজারে যে প্যাকেটজাত জৈবসার আছে সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় পরিকল্পনা করেছিলাম কীভাবে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারি। যাতে কমে নিজের জমিতে সার প্রয়োগের জন্য অন্য কারও মুখাপেক্ষী হওয়া না লাগে। অবশেষে ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পাওয়ায় প্ল্যান্টটি স্থাপন করি। এখন পর্যন্ত এই প্ল্যান্ট থেকে ৫০০ কেজি সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করেছি। আরও ৫০০ কেজির মতো সার প্ল্যান্টে তৈরি হচ্ছে। সেগুলো বিক্রি করব। এরই মধ্যে গ্রামের অনেক কৃষক সারের অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছেন।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মৃন্ময় রায় তনু বলেন, মাটির স্বাভাবিক গঠন উর্বরতা বজায় রাখতে জৈব সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। ভার্মি-কম্পোস্ট সার ব্যবহারে রাসায়নিক সারের পরিমাণ কম লাগে। ফলে কৃষকের খরচ কমে এবং কৃষক লাভবান হয়। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে সার উৎপাদন করে সাগর শিকদার তার নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে প্রতিবেশীদের কাছেও বিক্রি শুরু করেছেন।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ভার্মি-কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির জৈব উপাদান বৃদ্ধি পায়, গাছের শেকড়ের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং ফল ও শাকসবজির স্বাদ ও গুণগতমান উন্নত করে। তাই আমরা কৃষকদের মধ্যে ভার্মি-কম্পোস্ট সার প্রয়োগের জন্য সচেতনতা তৈরি করছি।

সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ভার্মি-কম্পোস্ট একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও গাছের বৃদ্ধি-উন্নয়নে সহায়তা করে। এটি রাসায়নিক সারের পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষির উৎপাদন খরচ কমানো এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভর্মি-কম্পোস্টের ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

এমজে