ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ করতে গত ৮ জুন বনানী থানায় গিয়েছিলেন। পরীমণির থানায় যাওয়ার সেই রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছে গুলশান থানা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায়, অসংলগ্ন অবস্থায় তিনি থানায় এসেছিলেন এবং ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না।

সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

এদিকে সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমণি। মামলা দায়েরের পর ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার দুপুরে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

 ৯ জুন রাত ৩টা ৫২ মিনিটে বনানী থানায় যান পরীমণি 

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, তিনি যে বনানী থানায় এসেছিলেন সেই ভিডিওগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি। আমরা দেখেছি উনার কী অবস্থা ছিল। এছাড়া এই ক্ষেত্রে রূপনগর থানা ও সাভার থানা পুলিশ অবশ্যই ঘটনাস্থলের যে সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ আছে সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে।

বনানী থানার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পারি, গত ৯ জুন রাত ৩টা ৫২ মিনিটে পরীমণি থানায় আসেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুইজন ছিলেন। তিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। কিছুটা অসংলগ্ন অবস্থায় তার দুই জন সঙ্গী তাকে প্রায় পাঁজাকোলা করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় তিনি কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগটি এমন ছিল, সাভার ও বিরুলিয়া মাঝখানে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে কয়েকজন ব্যক্তি জোর করে মদের সঙ্গে ড্রাগ মিশিয়ে পান করানোর চেষ্টা করে এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

তিনি বলেন, তিনি যেহেতু অসংলগ্ন অবস্থায় ছিলেন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তখন ডিউটি অফিসার তাকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। স্বাভাবিক হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করার জন্য ডিউটি অফিসার তাকে অনুরোধ করেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে বনানী থানার একটি মোবাইল টিম তাকে নিরাপত্তা দিয়ে বসুন্ধরায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতাল পৌঁছে দেয়। পরের দিন তার থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করার কথা ছিল। পরবর্তীতে তিনি থানার অফিসার এবং আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বা অভিযোগ দায়ের করতে আসেননি। তিনি আইজিপি মহোদয় ও ডিএমপি কমিশনার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও বলেছেন। আসলে উনার ওই পর্যায়ে কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিনি যেহেতু পরবর্তীতে বিষয়টি আমাদের জানাননি তাই এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, গতকাল পরীমণির ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি প্রথমে জানতে পারি। তারপর গতকাল রাতে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তখন আমরা ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে পারি। এরপর থেকেই আমরা তদন্তে নামি। গতকাল বিষয়টি আমরা অবগত হওয়ার পর অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। ঘটনাটি যেহেতু ঢাকা বোট ক্লাবে ঘটেছে সেহেতু ডিএমপি গুলশান বিভাগ, মিরপুর বিভাগ ও ঢাকা জেলা থানা সমন্বিতভাবে এ বিষয়ে কাজ করছে।

মামলা দায়েরের বিষয়ে ডিসি গুলশান বলেন, গতকাল মধ্য রাত পর্যন্ত আমরা মামলা রুজু করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করছিলাম। পরে আজ ভোরে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ করেন। যেহেতু ঘটনাস্থল সাভার থানায় তাই অভিযোগটি সাভার থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাভার থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে তিনি বনানী থানা এলাকায় বসবাস করেন তাই বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন কি না সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। বনানী থানার মোবাইল টহল টিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার জন্য।

তিনি বলেন, তার পাশে আমরা আছি। তাকে আইনি সেবার পাশাপাশি মানসিক সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তার অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকা জেলা পুলিশ ও ডিএমপি যৌথভাবে কাজ করছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য পুলিশ কাজ করছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালো কিছু করা যাবে। 

আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশানের ডিসি বলেন, একটি কথা বলতে আইজি ও ডিএমপি কমিশনার মহোদয় এ বিষয়ে অবগত আছেন। ডিএমপির গুলশান ও মিরপুর বিভাগ এবং ঢাকা জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ন্যূনতম কোনো চাপ নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, পরীমণি বাংলাদেশের সবার কাছে পরিচিত এবং সেলিব্রেটি তাই তার স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও আমাদের দেখতে হচ্ছে। তার কোনো ধরনের গোপনীয়তা যেন নষ্ট না হয় সেটিও আমরা দেখছি। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল এমন বিবেচনা মাথা নিয়ে আমাদের কাজটি করতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনার দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীমণির বিরুদ্ধে যে অশ্লীল অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এই বিষয়ে পুলিশ কি ব্যবস্থা নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশানের ডিসি বলেন, একজন মানুষের যে মানবিক মর্যাদা সেটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। যে অপরাধের শিকার হবেন তার জন্য অবশ্যই আইনের সব দরজা খোলা রাখতে হবে। তিনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে থাকেন এক্ষেত্রে তিনি লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি কিন্তু আমাদের ডিএমপির সাইবার ইউনিট ইতোমধ্যে আমলে নিয়েছে। তারা এই বিষয়ে কাজ করছে। যারা সাইবার অপরাধ করবে এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএসি/এসকেডি