চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আলোচনায় এসেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাব। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা ঘটনার ৫ দিন আর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও আলোচিত ক্লাবটিতে এখনো কোনো অভিযান চালায়নি পুলিশ। যায়নি আলামত সংগ্রহের জন্যও। এমনকি ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহেরও চেষ্টা করা হয়নি। 
 
ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, বোট ক্লাবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথসহ বিভিন্ন হলরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও ক্লাবের বারে কোনো ক্যামেরা ছিল না। পুলিশ এখনো সেখানে অভিযান চালায়নি।
 
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সোমবার সারাদিন আমরা আসামি ধরতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই বোট ক্লাবের ফুটেজ এখনো সংগ্রহ করা হয়নি।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভিজাত নাগরিকদের অন্যতম বিনোদন ও আড্ডার জায়গা ঢাকা বোট ক্লাবে সদস্য পদ পেতে গুনতে হয় ১৫ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে লাগে ১০ হাজার টাকার সার্ভিস চার্জ। এরপরেও কেন ক্লাবটির বারে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়নি? এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ক্লাবের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য (অ্যাডমিন) বখতিয়ার আহমেদ খান বলেন, এখানে একটা লাইসেন্সড বার রয়েছে। সদস্যদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বারের ভেতরে কোনো সিসি ক্যামেরা রাখা হয়নি। 

বোট ক্লাবে সাধারণত ডোনার মেম্বার, লাইফটাইম মেম্বার এবং পার্মানেন্ট মেম্বার ক্যাটাগরিতে সদস্যপদ দেওয়া হয়। ডোনারদের সদস্যপদ নিতে ১৫ লাখ, লাইফটাইম মেম্বারদের সাড়ে ১২ লাখ, পার্মানেন্ট মেম্বার ১০ লাখ, ফরেন মেম্বার ৫০ হাজার এবং অ্যাসোসিয়েট মেম্বার পদের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়াও ক্লাবের মেম্বারশিপ পেতে আবেদনকারীকে ৩ জন বর্তমান মেম্বারের সুপারিশ দিতে হয়।  
সদস্যদের জন্য সেখানে আড্ডা, ইনডোর খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়া, ডিজে পার্টি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুমোদিত একটি বার রয়েছে। বারে নামমাত্র মূল্যে মদ্যপান করার ব্যবস্থা আছে।

পরীমণির মামলা

ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এর আগে সকালে রূপনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পরীমণি।

সাভার থানার পরিদর্শক কাজী মাইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীমণি নিজে বাদী হয়ে মোট ৬ জনের নামে এ মামলা করেছেন (মামলা নম্বর ৩৮)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ৯ জুন (বুধবার) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়। 

রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন এই অভিনেত্রী। পরে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।

পরীমণি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণত মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন? 

কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাই, আপনি নির্ভয়ে বলুন— উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন।

পরীমণি আরও বলেন, সাধারণ কোনো মেয়ের বিষয় হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!

তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরুব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন।

‘নাসির উদ্দিনসহ (নাসির ইউ মাহমুদ) উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।’

নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি।

এমএসি/এআর/এসকেডি/জেএস