আশুলিয়ার বেড়িবাঁধ সড়ক ধরে বিরুলিয়ার দিকে কিছুটা গেলেই হাতের ডানে ঢাকা বোট ক্লাব। তিন দিক পানিতে ঘেরা ক্লাবটির রয়েছে নান্দনিক স্থাপনা। অভিযোগ আছে, প্রথমে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ক্লাবের নামে কিছু জমি ক্রয় করা হলেও পরে বিভিন্ন কায়দায় জমি দখল করে তুরাগ তীরে গড়ে উঠেছে এই ক্লাব।

ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (২০১৬-৩৫) এর আওতায় ঢাকা মহানগর বিশদ পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নের পথে রয়েছে সরকার। অনুমোদনের পর এই ড্যাপই নির্ধারণ করবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার উন্নয়ন কীভাবে হবে। বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে অনেক সমস্যার। আর যেন অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ না হয়, সেজন্য ড্যাপ বাস্তবায়ন হচ্ছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি ঢাকা বোট ক্লাবের ভবন নির্মাণ বিষয়ে প্রথম দিকে নেতিবাচক ছিল ড্যাপ। কিন্তু পরে ড্যাপ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি রিভিউ করে। রিভিউতে ড্যাপ সম্পর্কিত রিভিউ কমিটি ঢাকা বোট ক্লাবের ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবটি তাদের ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে।

এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ এবং ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপ রিভিউ আবেদন করেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। প্রথমে রাজউক থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট গিয়েছিল। রিভিউয়ের পর মূল কমিটি এটার অনুমোদন দিয়েছে। ড্যাপ সম্পর্কিত যে রিভিউ কমিটি আছে সেখান থেকে অনুমোদন পেয়েই তারা ভবন নির্মাণ করেছে।

জানা গেছে, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে সংশোধিত বিশদ নগর অঞ্চল পরিকল্পনায় নতুন পাঁচটি কর্মপন্থা অন্তর্ভুক্ত করছে রাজউক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভূমির পুনঃউন্নয়ন, ভূমির পুনর্বিন্যাস, উন্নতি সাধন ফি, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন স্বত্ব প্রতিস্থাপন। এগুলো বিবেচনা করে বোট ক্লাবের ভবন নির্মাণ বিষয়ে প্রথমে নেগেটিভ রিপোর্ট দিলেও পরবর্তীতে এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

বোট ক্লাবের পরিকল্পিত অবকাঠামোর এখনও ৬০ ভাগ নির্মাণ কাজ বাকি

বর্তমানে বোট ক্লাবের তিন তলা ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। যদিও পরিকল্পিত অবকাঠামোর এখনো ৬০ ভাগ নির্মাণ কাজ বাকি। নদী তীরের এই স্থাপনা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। নদীর সীমানার ২০০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা তৈরি না করার নিয়ম থাকলেও তা মানেনি বোট ক্লাব।

এদিকে তুরাগ নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ঢাকা বোট ক্লাবের স্থাপনা ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন সবুজ আন্দোলন। বুধবার (১৬ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, শহরের চারপাশ দিয়ে তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু নদী ও মেঘনা নদী প্রবাহিত। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও নদীগুলো দখল-দূষণে জর্জরিত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তুরাগ নদীর।

তারা আরও জানান, নদীর চারপাশে শিল্প কারখানা ও অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় নদী সংকুচিত হয়েছে। নদীর জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় স্থাপনা। এরমধ্যে অন্যতম ঢাকা বোট ক্লাব। যদিও ক্লাবটি অন্য ব্যক্তির লিজে নেওয়া জমির ওপর জোর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদীর সীমানা পিলার নির্ধারণ করার বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত। বিআইডব্লিউটিএ নদীর যে সীমানা পিলারগুলো নির্ধারণ করেছে তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।

ক্লাবটির বিষয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হওয়া ঢাকা বোট ক্লাবে প্রতিদিনই পার্টি হয়। দামি দামি গাড়ি নিয়ে অনেকেই এখানে আসেন আনন্দ-উৎসবে মাততে। 

সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীদের ভাষ্য মতে, ক্লাবটি প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চালু থাকে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কখনো কখনো এটি গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এখানে মানুষের আনাগোনা বেশি থাকে।

এএসএস/এমএইচএস/জেএস