‘গৃহায়ন ধানমন্ডি’ প্রকল্পের আওতায় বিধিবহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বরাদ্দে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার জহুরুল হক ও সাবেক দুই সচিব।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও লিখিত বক্তব্য নেন দুদক টিম। এর মধ্যে সাবেক সচিব মো. ইউনুসুর রহমান ও সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যদিকে দুদকের সাবেক কমিশনার জহরুল হক লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন।  

জিজ্ঞাসাবাদ ও লিখিত বক্তব্যে তারা দুদকের টিমের কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন বলে জানা গেছে। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের সাবেক কমিশনারসহ দুজন অনুসন্ধানকারী টিমের কাছে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। তারা দুজনেই একই বক্তব্য দিয়েছেন। তারা দাবি করেন, তারা শুধু নিয়ম মেনে আবেদন করেছেন, বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। যদি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকে তা গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিষয়। এখানে তাদের কোনো দায় নেই।

দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ১১ সেপ্টেম্বর দুদকের সাবেক দুই কমিশনারসহ এক ডজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। সে অনুসারে বুধবার সাবেক দুই কমিশনারসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল।

বৃহস্পতিবার বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম, সাবেক সচিব মো. সিরাজুল হক খান, সাবেক চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল বাছিদকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। 

এছাড়া সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, সাবেক সচিব মো. আনিছুর রহমান ও সাবেক সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুককে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ‘গৃহায়ন ধানমন্ডি (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় নীতিমালা ভেঙে উচ্চমূল্যের ফ্ল্যাট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী, ধানমন্ডির ১৩ নম্বর (নতুন ৬/এ) সড়কের ৬৩ নম্বর প্লটে নির্মিত ১৪ তলা ভবনের ১৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৬০ শতাংশ (১২টি) সরকারি এবং ৪০ শতাংশ (৬টি) বেসরকারি কোটায় বরাদ্দযোগ্য ছিল। 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে নেওয়ায় জড়িত’ থাকা সচিব পদমর্যাদার এই ১২ কর্মকর্তাকে পুরষ্কারস্বরূপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ৫ মে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। এরপর দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে। 

গত ১২ মে অভিযান চালিয়ে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার কথা জানায় দুদক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ধানমন্ডি-৬ এর ৬৩ নম্বর প্লটটি মূলত সরকারি খাস জমি। যার বাজারমূল্য অত্যন্ত বেশি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই জমি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে সেখানে ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটিতে দুটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ও নিচতলাসহ দুই তলা গাড়ি পার্কিং রয়েছে। এর মধ্যে ডুপ্লেক্স দুটি বরাদ্দ পান দুদকের সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান এবং জহরুল হক। বাকি ১০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয় অন্যান্য সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নামে।

কমিশনের দুই সদস্যদের একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিনের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান টিমের অপর সদস্য হলেন উপ-সহকারী পরিচালক নাহিদ ইসলাম।

আরএম/এসএম