ছবি : ফেসবুত থেকে সংগৃহীত

রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অফিসগামী মানুষ বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে সকালে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে।

এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সামনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ফ্লাইট ধরতে আসা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। এছাড়া এখানে জলাবদ্ধতার কারণে বেশ কয়টি গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

এমন পরিস্থিতি পড়া একটি ফ্লাইটের যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, দেশের একটি বিমানবন্দরের সামনে যদি এভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, তাহলে অন্য জায়গার কি অবস্থা তা কল্পনাই করা যায়। এখানে সাধারণ যাত্রীসহ বিদেশি, প্রবাসীরা বিমানবন্দরে ঢুকতে, বের হতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ছেন। বৃষ্টি হলেই বারবার এমন জলাবদ্ধতা হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান বিমানবন্দরের সামনে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

ডমেস্টিক টার্মিনাল এলাকায় হাঁটু সমান পানিতে আটকে গেছে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। মূলত ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রী এসেছিল ফ্লাইট ধরতে, কিন্তু বিমানবন্দরে ঢোকার পথে সিএনজি পানিতে ডুবে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। পরে যাত্রী বের হয়ে হাঁটু পানি মাড়িয়ে ডমেস্টিক বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেছে। কিন্তু আমার সিএনজি বন্ধ হয়ে আছে ইঞ্জিনে পানি ঢোকার কারণে। এই অবস্থায় ঠেলে বাইরে নিয়ে যাওয়ার ছাড়া আর আপতত কোনো উপায় নেই। বারবার বিমানবন্দরের সামনে এভাবে পানি জমার কারণে বিমানের যাত্রীসহ আমাদের খুব বিড়াম্বনা হয়।

ছবি: সংগৃহীত

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সড়কের পাশেই আশকোনো হজ ক্যাম্প থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত টানেলের কাজ চলছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি অপসারণের অনেকগুলো লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভারী বর্ষণ হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে ডমেস্টিক টার্মিনালের সামনে। আবার অভিযোগ রয়েছে, মূল কাজটি সিভিল অ্যাভিয়েশনের হলেও এ বিষয়ে সমাধানের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।

গেল কয়েক মাস আগে এমন সমস্যা সমাধানে বিমানবন্দর রেলস্টেশন-সংলগ্ন আশকোনা রেলগেট এবং এর আশপাশের উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সেসময় তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে এয়ারপোর্ট-আশকোনা এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেবিচক, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন একযোগে কাজ করবে। তবে এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান কোনো কাজ চোখে পড়েনি।

বিমানবন্দরের সামনে ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়তি জনভোগান্তি তৈরি করেছে যানজট। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি। জলাবদ্ধতার এলাকা চিহ্নিত করে তা নিরসনের কাজ চলমান আছে। এছাড়া কালশি রোডে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন ডিএনসিসি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এবিএম সামসুল আলম। তবে পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় ধানমন্ডি ২৭ এ এবার কোনো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি বলেও দাবি করেছে ডিএনসিসি।

ছবি : সংগৃহীত

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র রাসেল রহমান বলেন, বজ্রসহ মুষলধারার বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট অস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

তিনি বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে রোববার রাত থেকে রাজধানীতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এএসএস/এসএ